রমজানের প্রথমদিন গ্যাসের সংকটে চুলা জ্বলেনি রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায়। ইফতারি তৈরিসহ রান্নার কাজে ভোগান্তিতে পড়েন ঢাকার বাসিন্দারা। এ নিয়ে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের অন্যান্য মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। অনেকেই ইফতারি ও রান্নার কাজ করতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্ট্যাটাস দেন ফেসবুকে।
জানা যায়, রাজধানীর জিগাতলা, শ্যামলী, কল্যাণপুর, আগারগাঁও, শেওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুর, কাফরুল, আদাবর, বনশ্রী, রামপুরা, বসুন্ধরা আবাসিক, আজিমপুর, লালবাগ, এলিফ্যান্ট রোড, গ্রিন রোড, মতিঝিল, মুগদা, সেগুনবাগিচা, নারিন্দা, ওয়ারিসহ পুরান ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকায় রোববার প্রায় দিনভর গ্যাস সংকট ছিল। এছাড়া মিরপুর ১, ২ ও ১০ নম্বর এলাকায়ও গ্যাসের সংকটে ইফতারি ও রান্নার কাজ করতে ভোগান্তিতে পড়েন অনেকেই।
আবার কোনো কোনো এলাকায় ছিল না বিদ্যুৎ। এতে ভোগান্তি আরো বাড়ে। পূর্বঘোষণা ছাড়া এভাবে গ্যাস না থাকায় বিপাকে পড়তে হয় নগরবাসীকে। শুধু রোববারই নয়, গত সপ্তাহখানেক ধরে রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক নয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রমজানের প্রথমদিনটি এমন দুর্ভোগের মধ্যে কাটলেও গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি কখন স্বাভাবিক হবে, তা এখনই নিশ্চিত করে বলতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। রক্ষণাবেক্ষণের কারণে বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের ছয়টি কূপ থেকে উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন। আজ রোববার দুপুরের দিকে হঠাৎ প্রায় ৪৫ কোটি ঘনফুট উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গ্যাসের সরবরাহে বড় ধরনের সংকট দেখা দেয়।
কূপ থেকে তোলার পর প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে পাইপলাইনে বিশুদ্ধ গ্যাস সরবরাহ করা হয়। আর গ্যাসের সঙ্গে আসা নানা উপজাত আলাদা করে ফেলা হয়।
পেট্রোবাংলা ও শেভরন সূত্র বলছে, দুপুরে হঠাৎ মৌলভীবাজারের বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাসের সঙ্গে বালু উঠে আসে। কোন কূপ থেকে উঠছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করা যায়নি। তাই জরুরি ভিত্তিতে ছয়টি কূপের উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
শেভরন বাংলাদেশের মুখপাত্র শেখ জাহিদুর রহমান রোববার রাতে মত ও পথকে বলেন, ‘রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের গ্যাস প্রক্রিয়াকরণের দুটি ইউনিটে বেলা সোয়া একটা থেকে উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে গ্যাসের উৎপাদন কমে গেছে। পুরোপুরি উৎপাদনে ফেরানোর কাজ চলছে। কখন আবার উৎপাদন শুরু হবে, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।’
বিবিয়ানা বর্তমানে সবচেয়ে বড় গ্যাস উৎপাদন ক্ষেত্র। হঠাৎ উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় দুপুরের পর থেকে ধীরে ধীরে গ্যাসের সরবরাহ কমতে থাকে। ঢাকার গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাসের অভিযোগ কেন্দ্রে দুপুরের পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ভোক্তা অভিযোগ জানাতে থাকেন। মোহাম্মদপুর, মিরপুর, মগবাজার, কাঁঠালবাগান, কলাবাগান থেকে বারবার ফোন করেন গ্রাহকরা।
দেশে দিনে চাহিদা ৩৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস। গড় সরবরাহ ২৮০ কোটি ঘনফুট। বিবিয়ানায় কমেছে প্রায় ৪৫ কোটি ঘনফুট।
সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জের অধিকাংশ শিল্পকারখানায় উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। উৎপাদনের জন্য গ্যাসের যে পরিমাণ চাপ দরকার হয়, তার পাঁচ ভাগের এক ভাগ পাওয়া গেছে। এটা দিয়ে বেশির ভাগ কারখানায় উৎপাদন সম্ভব হয় না।
দেশে দিনে ৩৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা থাকলেও শনিবার মোট গ্যাস সরবরাহ করা হয় ২৭৯ কোটি ঘনফুটের মতো। এর মধ্যে বিবিয়ানা থেকে সরবরাহ করা হয় ১১৫ কোটি ঘনফুট। রোববার দুপুরের পর থেকে বিবিয়ানায় উৎপাদন প্রায় অর্ধেক কমে যায়। এতে বাসার চুলায়, শিল্পকারখানায় ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ কমতে থাকে। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।
পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) আশরাফুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সরবরাহ কমায় গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন কিছুটা কমানো হয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটেনি। ময়মনসিংহসহ কিছু এলাকায় লোডশেড হতে পারে।’
এমন পরিস্থিতিতে দুঃখপ্রকাশ করে রোববার দুই দফা বিবৃতি দিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রথম দফায় বলা হয়, ‘শেভরন পরিচালিত বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের স্বল্প চাপের সৃষ্টি হতে পারে। অভিজ্ঞ প্রকৌশলীরা মেরামতের কাজ করে যাচ্ছেন।’
দ্বিতীয় দফা বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গ্যাস সরবরাহ ঘাটতির কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটছে। কোনো কোনো এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে।’