‘জাতীয় সরকারের’ দাবিকে যেভাবে বিবেচনা করছে আওয়ামী লীগ

হাসান শান্তনু

বিএনপির নেতৃত্বের ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টভুক্ত কয়েকটি দলের দাবি ‘জাতীয় সরকার’ গঠনের। শরিকদের চাপে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে বিএনপি এখন এমন সরকার গঠনের কথা বলছে। শরিকদের জাতীয় সরকারের রূপরেখার সঙ্গে বিএনপির প্রস্তাবিত চিন্তার অমিল থাকলেও বিষয়টি রাজনীতিতে এখন অন্যতম আলোচিত বিষয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যেও সরকারবিরোধী দলগুলোর দাবি নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

আওয়ামী লীগ মনে করছে, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে পৃথিবীর কোনো দেশে জাতীয় সরকার গঠন হয় না। যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ জরুরি পরিস্থিতিতে তা গঠন হয়। কাজেই দেশে জাতীয় সরকার গঠন হবে না, এর সুযোগও নেই। বিএনপির নেতা ও তাদের মিত্রদলের এ ধরনের ‘দায়িত্বহীন বক্তব্য রাজনীতিতে সংকট সৃষ্টির ষড়যন্ত্র’ বলে মনে করছেন সরকারি দলের নেতারা।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘জাতীয় সরকার গঠনের নামে দেশের রাজনীতির মাঠ গরমের ষড়যন্ত্র করছে বিএনপি। দলটির একেক নেতা একেক সময় ভিন্ন ভিন্ন সুরে কথা বলছেন। কখনো নির্বাচনকালীন সরকার, কখনো নিরপেক্ষ সরকার, কখনো জাতীয় সরকারের কথা বলে রাজনীতির মাঠ গরম করার ষড়যন্ত্র করছেন। সংবিধানসম্মতভাবে যথাসময়ে আগামী সংসদ নির্বাচন হবে।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বিএনপির জাতীয় সরকার হবে রাজাকার, আলবদর, বিএনপি-জামায়াতসহ বাংলাদেশবিরোধী ও দেশের শত্রুদের সরকার। আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করবে বিএনপি, সেটি কী জাতীয় সরকার হবে?’

পরবর্তী সংসদ নির্বাচনের সময় অন্তর্বর্তীকালীন, না জাতীয় সরকার- এ নিয়ে জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে ওঠা বিতর্কের রেশ টানতে জাতীয় সরকারের নতুন ধারণা নিয়ে হাজির হতে চাচ্ছে বিএনপি। শরিকদের চাপের মুখে শিগগিরই জাতীয় সরকারের এ ধারণা তুলে ধরে সরকারবিরোধী দলগুলোকে একত্র করার উদ্যোগ নেবে দলটি।

বিএনপির সূত্র বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে চলতি বছরে দলের নেতৃত্বে ‘বৃহত্তর নতুন ঐক্য’ গড়ার উদ্যোগ ‘হোঁচট’ খায় জাতীয় সরকার প্রশ্নে। বিএনপির নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সরকারের দাবি হলেও জোটের শরিক বেশ কয়েকটি দল চায় জাতীয় সরকার। এতে জোট গঠন প্রক্রিয়া গতি হারায়।

তাই নতুন রাজনৈতিক কৌশলের সিদ্ধান্ত নেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। গত সোমবার বিএনপির যুক্তরাজ্য শাখার আলোচনা সভায় দেওয়া বক্তব্যে জাতীয় সরকারের বিষয়ে আভাস দেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বিএনপি বলছে, নির্বাচনের আগে নয়, বিজয়ী হলেই জাতীয় সরকার গড়তে চায় দলটি। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ‘নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের’ অধীনে হতে হবে।

তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা উঠে গেলেও বিএনপি ওই সরকার ব্যবস্থার ফের দাবি জানিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ, দলটির নেতৃত্বের সরকার বরাবরই দাবি নাকচ করে বলে আসছে, ‘সরকার সংবিধান থেকে একচুলও নড়বে না।’ পরবর্তী সংসদ নির্বাচন ‘দলনিরপেক্ষ সরকারের’ অধীনে আয়োজনের দাবিতে ‘চূড়ান্ত আন্দোলনের’ পথে যেতে চায় বিএনপি।

চলতি বছর থেকে সরকারও বিএনপির কর্মসূচি পালনের বিষয়ে আগের মতো ‘কঠোর অবস্থান’ দেখাচ্ছে না। সামনের নির্বাচন ঘিরে আর্ন্তজাতিক পর্যবেক্ষণ বাড়ছে। উচ্চমহলের রাজনৈতিক আলোচনায় এখন ঘুরেফিরে বেশি আসছে আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে।

আওয়ামী লীগ, সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র মত ও পথকে জানায়, সংবিধানের বাইরে কিছু করতে সম্মত নয় দল ও সরকার। দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা সরকারের এ অবস্থানের কথা জানিয়েছেনও। বিএনপি অংশ না নিলেও সংবিধানে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান থেকে সরে আসবে না সরকার। প্রয়োজনে দশম সংসদ নির্বাচনের মতো বিএনপিকে ছাড়া সরকার ও আওয়ামী লীগ যথাসময়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে অগ্রসর হবে।

ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্বের ১৪ দল ও মহাজোটের শরিক দলগুলোও চায় সংবিধানের ভেতরে থেকে নির্বাচন। সংবিধানের বাইরে অন্য কোনো রূপরেখায় পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিপক্ষে সংসদের বিরোধীদল ও মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি (জাপা)।

সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পর নির্বাচনের সময় নির্বাচিত, অর্থাৎ আওয়ামী লীগের সরকার দায়িত্ব পালন করে আসছে। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়। সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচনও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের সরকারের অধীনে নির্ধারিত সময়ে আয়োজন হবে।

শেয়ার করুন