ইতিহাস গড়তে টাইগারদের প্রয়োজন ২৭৪ রান

ক্রীড়া ডেস্ক

ডারবান টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকাকে বেশি দূর যেতে দিলো না মুমিনুল বাহিনী। সমিল্লিত বোলিং তোপে স্বাগতিকদের ২০৪ রানে থামিয়ে দিয়েছে টাইগাররা। প্রথম ইনিংসের ৬৯ রানের লিডসহ বাংলাদেশের সামনে ২৭৪ রানের লক্ষ্য দিয়েছে প্রেটিয়ারা।

দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কখনও টেস্ট জিততে পারেনি বাংলাদেশ দল। এখন তৈরি হয়েছে সেই সুযোগ। ডারবানের কিংসমিডে ম্যাচের শেষ ইনিংসে ২৭৪ রান করতে পারলেই প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর গৌরব অর্জন করবে টাইগাররা।

অতীত ইতিহাস থেকেও অনুপ্রেরণা নিতে পারবেন মুমিনুল হক, লিটন দাসরা। ডারবানের এই মাঠে ২৭০ রানের বেশি তাড়া করে জেতার রেকর্ড রয়েছে ৮টি। সবশেষ ২০১৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩০৪ রান করে জিতেছিল শ্রীলঙ্কা।

তবে বাংলাদেশের নিজেদের চতুর্থ ইনিংসের ইতিহাস খুব একটা ভালো নয়। এখন পর্যন্ত ৩৩টি ম্যাচে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মাত্র চারবার সফল হয়েছে টাইগাররা। সর্বোচ্চ ২১৭ রান তাড়া জয়ের রেকর্ড রয়েছে বাংলাদেশের। তাই এবার নতুন ইতিহাসই লিখতে হবে মুমিনুলদের।

আগের দিন ৪ ওভার খেলে বিনা উইকেটে ৬ রান করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সেখান থেকে আজ প্রথম উইকেট জুটি টেকে ১৯তম ওভার পর্যন্ত। দলীয় ৪৮ রানের মাথায় এবাদতের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফেরেন ৫১ বলে ৮ রান করা এরউই।

এটি প্রথমে আউট দেননি আম্পায়ার। তবে রিভিউ নিতে ভুল করেনি বাংলাদেশ। যা আসে টাইগারদের পক্ষে। থার্ড আম্পায়ার আউটের সিদ্ধান্ত জানাতেই নিজের ট্রেডমার্ক স্যালুট দেন এবাদত। অবশ্য এরউইয়ের আগেই সাজঘরে ফিরতে পারতেন এলগার।

দিনের দ্বিতীয় ওভারে প্রোটিয়া অধিনায়কের বিপক্ষে জোরালো আবেদন করেছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। কিন্তু আউট দেননি আম্পায়ার। বাংলাদেশ দল রিভিউ নিলে দেখা যায়, হিটিং অংশ ছিল আম্পায়ার্স কল। অর্থাৎ আম্পায়ার আউট দিলে সেটিতে উইকেট পেতো বাংলাদেশ।

এই দফায় রিভিউতে বাঁচার পর আরও দুইবার ক্যাচ দিয়েও জীবন পান এলগার। মিরাজের করা ইনিংসের ২০তম ওভারের প্রথম বলে তার ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে বল চলে যায় প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো নাজমুল হোসেন শান্তর কাছে। কিন্তু সেটি তালুবন্দী করতে পারেননি শান্ত।

পরে এবাদতের করা ২৩তম ওভারের দ্বিতীয় বলে দ্বিতীয় স্লিপে দাঁড়িয়ে ক্যাচ ছাড়েন ইয়াসির রাব্বি। প্রথমে ৩৪ ও পরে ৪৩ রানে জীবন পান এলগার। সেখান থেকেই তুলে নেন চলতি ম্যাচে দ্বিতীয় ও ক্যারিয়ারের ২১তম ফিফটি।

আরেক অপরাজিত ব্যাটার কেগান পিটারসেনের বিরুদ্ধে রিভিউ নিলে উইকেট পেতে পারতো বাংলাদেশ। খালেদের করা ২৬তম ওভারের ভেতরে ঢোকা ডেলিভারি গিয়ে আঘাত হানে কেগানের ভেতরের পায়ের প্যাডে। কিন্তু আউট দেননি আম্পায়ার।

বোলার খালেদ পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলেন এটি আউট, কিন্তু রিভিউ নেননি অধিনায়ক মুমিনুল হক। পরে রিপ্লে’তে দেখা যায়, তিনটি লাল অর্থাৎ আউট ছিলেন কেগান। আম্পায়ারের বদান্যতা ও বাংলাদেশের অদক্ষতায় ১৪ রানে বেঁচে যান কেগান।

তবে দ্বিতীয় সেশনের শুরুতেই প্রোটিয়া অধিনায়ক ডিন এলগারের উইকেট তুলে নেয় টাইগাররা। অবশ্য সরল পথে মেলেনি সেটি। আম্পায়ার প্রথমে নট আউট দেওয়ার পর রিভিউ নিয়ে উইকেট আদায় করেছে মুমিনুল হকের দল।

ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি হাঁকিয়ে দলকে ভালোভাবেই এগিয়ে নিচ্ছিলেন এলগার। শেষ পর্যন্ত ইনিংসের ৩৮তম ওভারের তৃতীয় বলে তাকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন তাসকিন আহমেদ। তার ভেতরে ঢোকা ডেলিভারি সোজা আঘাত হানে এলগারের প্যাডে।

কিন্তু বাংলাদেশের জোরালো আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার মারাইস এরাসমাস। সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। রিপ্লে দেখে এলগারকে আউটের সিদ্ধান্ত জানান থার্ড আম্পায়ার। দলীয় ১১৬ রানে সাজঘরে ফেরার আগে ৬৪ রান করেন এলগার।

পরে ইনিংসের ৪৩তম ওভারে আরেক সেট ব্যাটার কেগান পিটারসেনের বিদায়ঘণ্টা বাজান মেহেদি হাসান মিরাজ। ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে নিখুঁত ক্যাচ ধরেন মাহমুদুল হাসান জয়। আউট হওয়ার আগে কেগানের ব্যাট থেকে আসে ৩৬ রান।

এক ওভার পরই সবাইকে বাকরুদ্ধ করে দেন ইয়াসির রাব্বি। ধারাভাষ্য কক্ষে থাকা ভারনন ফিল্যান্ডার ও নেইল ম্যাকেঞ্জি যেন ভাষাই হারিয়ে ফেললেন, মুখ থেকে বের হলো না কোনো কথা। সবসময় স্যালুট দিয়ে উইকেট উদযাপন করা এবাদত হোসেনও পুরোপুরি চুপ মেরে গেলেন।

ম্যাচের দুই ইনিংসে একটি করে ক্যাচ ছাড়ার পর অবিশ্বাস্য এক ক্যাচ ধরেন ইয়াসির। এবাদের করা ইনিংসের ৪৪তম ওভারের চতুর্থ বলে টেম্বা বাভুমার (৪) ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে চলে যায় স্লিপ অঞ্চলে।

খালি চোখে মনে হচ্ছিল হাতের নাগালে পাবেন না স্লিপে দাঁড়ানো ইয়াসির রাব্বি। তবে সবাইকে অবাক করে দিয়ে এক হাতেই সেটি তালুবন্দী করেন তিনি।

ইনিংসের ৫৩তম ওভারের প্রথম বলে রিভার্স সুইপ করতে চেয়েছিলেন প্রোটিয়া উইকেটরক্ষক কাইল ভেরেন। যা দেখে আত্মরক্ষায় ঘুরে যান সিলি পয়েন্টে দাঁড়ানো সাদমান ইসলাম অনিক। কিন্তু সেই বল লাগে ভেরেনের ব্যাটের নিচের কানায়।

পরে তার বুটে পড়ে বল যেতে থাকে শর্ট পয়েন্টের দিকে। এরই মধ্যে ঘুরে যাওয়া সাদমান দারুণ ক্ষিপ্রতায় বাম দিকে ঝাঁপিয়ে এক হাতেই সেটি লুফে নেন। ফলে বিদায়ঘণ্টা বাজে ১৫ রান করা ভেরেনের। পরের বলে ফিরতে পারতেন নতুন ব্যাটার উইয়ান মাল্ডারও।

মিরাজের অফস্ট্যাম্পের বাইরের ডেলিভারি মাল্ডারের ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে চলে যায় স্লিপে। কিন্তু প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো নাজমুল হোসেন শান্ত সেটি তালুবন্দী করতে পারেননি। শুধু তাই নয়, পরের ওভারের প্রথম বলে মাল্ডারের ফিরতি ক্যাচ ছেড়ে দেন খালেদ আহমেদ।

দুইটি ক্যাচ হাত থেকে ছুটলেও দ্বিতীয় সেশন ছিল পুরোপুরি বাংলাদেশের দখলে। যেখানে ২৮ ওভার খেলে মাত্র ৫২ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারিয়েছে স্বাগতিকরা। পরে দ্বিতীয় সেশনের শুরুতেই আরও দুই উইকেট তুলে নেন মিরাজ ও তাসকিন।

দুইবার ক্যাচ দিয়েও জীবন পেয়ে যাওয়া উইয়ান মাল্ডারকে নিজের তৃতীয় শিকারে পরিণত করেছেন মিরাজ। অফস্ট্যাম্পের বাইরে ফুল লেন্থের ডেলিভারিতে কভার ড্রাইভ করেছিলেন ১১ রান করা মাল্ডার। কিন্তু তার ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে বল জমা পড়ে স্লিপে দাঁড়ানো ইয়াসির রাব্বির হাতে।

মাল্ডারের বিদায়ের পর দ্রুত কিছু রান তুলে নেন রায়ান রিকেল্টন ও কেশভ মহারাজ। তবে এই জুটিকে থিতু হতে দেননি তাসকিন। ইনিংসের ৬৬তম ওভারের চতুর্থ বলে দারুণ এক ডেলিভারিতে ৫ রান করা মহারাজকে ফেরান কাঁধের ইনজুরি নিয়েই বোলিং করতে থাকা এ গতিতারকা।

এরপর শেষের তিন উইকেটে প্রথম ইনিংসের মতো বেশি রান তুলতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। এই ইনিংসে শেষ ৩ উইকেটে এসেছে ২১ রান। অবশ্য এর বেশি পারবেই কী করে? প্রথমে সাইমন হার্মার ও পরে লিজাড উইলিয়ামস কাটা পড়েছেন রান আউটে।

ডিপ কভার থেকে সরাসরি থ্রোয়ে হার্মারকে আউট করেন বদলি ফিল্ডার নুরুল হাসান সোহান। পরে মিস ফিল্ডিং থেকে রান চুরি করতে গিয়ে রানআউট হন লিজাড। এক ওভার পর ডুয়াইন অলিভারকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে প্রোটিয়াদের অলআউট করেন এবাদত।

বাংলাদেশের পক্ষে সমান ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন এবাদত হোসেন ও মেহেদি হাসান মিরাজ। এছাড়া তাসকিনের শিকার ২ উইকেট।

শেয়ার করুন