মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে আরও ৭ অপরাধ তদন্তের এখতিয়ার চায় দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুদক
ফাইল ছবি

মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে অধিকতর ভূমিকা পালনের জন্য প্রচলিত মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও বিধিমালার তফসিলে বর্ণিত আরও ৭টি অপরাধের অনুসন্ধান ও তদন্তের ক্ষমতা চায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ জন্য সংশ্লিষ্ট ধারায় সংশোধন চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি।

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি দুদক সচিব মাহবুব হোসেনের স্বাক্ষরে চিঠিটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়। এতে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ২(ঠ) ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা ২০১৯-এর তফসিলে বর্ণিত সাতটি অপরাধের এখতিয়ার কর্তৃপক্ষের বিষয়ে সংশোধনের তাগিদ দেওয়া হয়।

universel cardiac hospital

বর্তমানে কেবল ‘ঘুষ ও দুর্নীতি’র অনুসন্ধান ও তদন্ত করতে পারে দুদক। আরও যে সাতটি অপরাধের অনুসন্ধান ও তদন্তের এখতিয়ার চাইছে দুদক, সেগুলো হলো মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা ২০১৯-এর তফসিলে বর্ণিত দলিল-দস্তাবেজ জালকরণ (৩ নং), প্রতারণা (৫ নং), জালিয়াতি (৬ নং), দেশি-বিদেশি মুদ্রা পাচার (১৪ নং), চোরাচালানি ও শুল্ক সংক্রান্ত অপরাধ (১৮ নং), করসংক্রান্ত অপরাধ (১৯ নং) ও পুঁজিবাজার সংক্রান্ত অপরাধ (২৫ নং)।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট আইনে সংশোধনের জন্য প্রয়োজনে ব্যবস্থা নিতে বলা হয় হয় চিঠিতে।

মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ২(ঠ) সম্পৃক্ত ২৭টি অপরাধের মধ্যে কেবল একটি অপরাধ ‘ঘুষ ও দুর্নীতি’র অনুসন্ধানের এখতিয়ার রয়েছে দুদকের। দেশি-বিদেশি মুদ্রাপাচার, জালিয়াতি, প্রতারণা, শুল্কসংক্রান্ত অপরাধ অনুসন্ধান ও তদন্তের ক্ষেত্রে দুদকের এখতিয়ার রাখা হয়নি। কিন্তু এই আইনটি করার সময় মানিলন্ডারিংয়ের এসব অপরাধ তদন্ত করার এখতিয়ার ছিল দুদকের।

২০১৫ সালে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ সংশোধন হওয়ার পর জারিকৃত মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা, ২০১৯-এর তফশিলে ‘ঘুষ ও দুর্নীতি’ ছাড়া অন্য ২৬টি অপরাধসংশ্লিষ্ট মানিলন্ডারিং অনুসন্ধান ও তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর ও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের এর উপর ন্যস্ত করা হয়েছে।

দুদক বলছে, ব্যবসা-বাণিজ্য বা আমদানি-রপ্তানির আড়ালে (ট্রেড বেসড) অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনে এখতিয়ার না থাকায় এ ধরনের অর্থ পাচারের অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো অনুসন্ধান বা তদন্ত করতে পারে না।

মানিলন্ডারিং আইন সংশোধনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে দুদকের পাঠানো চিঠিতে আরও বলা হয়, ব্যবসা-বাণিজ্য ও আমদানি-রপ্তানির আড়ালে এবং হুন্ডি ও অন্যান্য অবৈধ প্রক্রিয়ায় অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগ এবং অর্থ পুনরুদ্ধারে দুদক ক্ষমতাপ্রাপ্ত না হওয়ায় বাংলাদেশের বাইরে মুদ্রা পাচারের অপরাধের তদন্ত করতে পারে না সংস্থাটি।

দুদকের মানিলন্ডারিং আইন

মানিলন্ডারিং তথা অর্থ পাচার, স্থানান্তর, রূপান্তরকে ‘শাস্তিযোগ্য অপরাধ গণ্য করে প্রথম ২০০২ সালে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। এ আইনে বাংলাদেশ ব্যাংক অথবা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি মানিলন্ডারিং অপরাধ তদন্ত করতে পারতেন।

পরবর্তীকালে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০০২ বাতিল করে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ অধ্যাদেশ ২০০৮ জারি করা হয়। অধ্যাদেশের অধীন অপরাধগুলো দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ মর্মে গণ্য করা। ওই অধ্যাদেশের অধীন ১৭টি সম্পৃক্ত অপরাধ থেকে উদ্ভূত সব মানিলন্ডারিং কেবল দুদক তদন্ত করতে পারবে।

মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ অধ্যাদেশ ২০০৮ বাতিল হয়ে পরে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০০৯ জাতীয় সংসদে পাস হয়। এই আইনের অধীন অপরাধগুলো দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ গণ্য করে দুর্নীতি দমন কমিশন বা কমিশন থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা কর্তৃক তদন্তযোগ্য ঘোষণা করা হয়।

এরপর মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০০৯ বাতিল করে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ অধ্যাদেশ ২০১২ জারি করা হয়, যা পরবর্তীতে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ হিসেবে জাতীয় সংসদে পাস হয়। ২০১২ সালের সংশোধিত আইনে ১৭টি সম্পৃক্ত অপরাধের পরিবর্তে ২৭টি সম্পৃক্ত অপরাধ প্রতিস্থাপন করা হয়। শুরুতে মানিলন্ডারিং অনুসন্ধান ও তদন্তের একমাত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ছিল দুদক।

২০১৫ সালে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ সংশোধন হওয়ার পরে জারিকৃত মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা, ২০১৯-এর তফশিলে ‘ঘুষ ও দুর্নীতি’ ছাড়া অন্য ২৬টি সম্পৃক্ত অপরাধসংশ্লি

শেয়ার করুন