মোমেন-ব্লিঙ্কেনের বৈঠকে যেসব বিষয়ে আলোচনা হবে

মত ও পথ ডেস্ক

মোমেন-ব্লিঙ্কেন
মোমেন-ব্লিঙ্কেন। ফাইল ছবি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পর দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে প্রথমবারের মতো সশরীরে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। ঢাকা-ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে সোমবার (৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে।

ওয়াশিংটনে মোমেন-ব্লিঙ্কেনের মধ্যে অনুষ্ঠেয় এ দ্বিপাক্ষিক বৈঠককে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে ঢাকা। ঢাকা বলছে, বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে কয়েকবার টেলিফোনে আলাপ করলেও এখন অবধি সশরীরে বৈঠক করার সুযোগ হয়নি ড. মোমেনের। প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠেয় বৈঠকে সামনের দিনগুলোতে একসঙ্গে চলার রূপরেখা প্রণয়নে গুরুত্ব দেবে উভয়পক্ষ। একই সঙ্গে ঢাকার এজেন্ডায় থাকবে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, বিনিয়োগ, জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা ইস্যু, খুনি রাশেদকে ফেরতের মতো বিষয়গুলো।

universel cardiac hospital

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তির দিনে ওয়াশিংটনে দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক কতটা গুরুত্ব বহন করে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। বৈঠকে দু’দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো তো আলোচনায় থাকবেই। উচ্চ পর্যায়ের সফরের বিষয়ে বলা হবে। যেহেতু ৫০ বছর অতিক্রম করেছি আমরা, সেক্ষেত্রে সামনে দিনে সম্পর্ক কীভাবে আরও গভীর করা যায় সেটাই হবে আলোচনার মুখ্য বিষয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন ড. মোমেন। সে সময় ওয়াশিংটনে মোমেন-ব্লিঙ্কেনের সরাসরি সাক্ষাতের কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র সফরে থেকেও ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ সারতে হয় মোমেনের। অবশ্য ড. মোমেনের সঙ্গে সশরীরে সাক্ষাৎ না করতে পারায় দুঃখ প্রকাশ করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। একই বছরের ডিসেম্বরে মোমেনকে ফোন করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

সেই ফোনালাপে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন ব্লিঙ্কেন। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ড. মোমেনকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রায় মাসখানেকের কম সময়ের মধ্যে আরেকবার আলাপ হয় মোমেন-ব্লিঙ্কেনের। সে সময় কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তীতে মোমেনকে ওয়াশিংটন ডি‌সি‌তে আমন্ত্রণ জানান ব্লিঙ্কেন।

ওয়াশিংটনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে শনিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, আমেরিকার সঙ্গে আমাদের খুবই ভালো সম্পর্ক। আমরা এ সম্পর্কটা আরও সামনে এগিয়ে নিতে চাই। গত বছর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফোন করে ওয়াশিংটন ডিসিতে আমার সঙ্গে বৈঠক করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। আমার এবারের সফরটা বিশেষ। আমাদের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্ণ হওয়ার দিনে বৈঠকটা হবে। আমরা সম্পর্ককে ডাইভারসিফাই করতে চাই। আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই।

বৈঠকে র‌্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি ঢাকা তুলবে কি না এবং অন্য কোন বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে— জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, র‌্যারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসার পর আমরা ওদের সঙ্গে যত আলাপ হয়েছে এটা তুলেছি। এবারও আমরা এটা তুলব। আমরা আশাবাদী, তারা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে। আমরা তাদের বলতে চাই, র‌্যাবের কারণে সন্ত্রাস কমেছে। র‌্যাব তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে, তারা সন্ত্রাস মোকাবিলায় কাজ করছে।

এছাড়া বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে মোমেন বলেন, আমাদের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হবে। আমরা আরও বেশি আমেরিকান ইনভেস্টমেন্ট চাই, সেটা নিয়ে আলাপ করব। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা হবে, গ্রিন এনার্জি নিয়ে আলোচনা হবে; রোহিঙ্গা ইস্যু থাকবে। তারা তো একজন খুনিকে (রাশেদ চৌধুরী) জায়গা দিয়ে রেখেছে, তাকে ফেরত দিতে বলব।

১৯৭২ সালের ৪ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীন দেশ হি‌সে‌বে বাংলা‌দেশ‌কে স্বীকৃ‌তি দেয়। এ দিনে ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাস কূট‌নৈ‌তিক সুবর্ণজয়ন্তীর ঐতিহাসিক দিনটি উদযাপন করবে। এতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ দেশটির উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন