সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বৈষম্য নিরোধে সংসদে নতুন বিল তোলা হয়েছে। মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) জাতীয় সংসদে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ‘বৈষম্য বিরোধী বিল-২০২২’ সংসদে উত্থাপন করলে তা ৩০ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ২৯ অনুচ্ছেদে অনুযায়ী সব ধরনের বৈষম্য নিরোধে এ খসড়া আইন করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, বৈষম্য নিরোধে একটি মনিটরিং কমিটি থাকবে। যার সভাপতি হবেন আইনমন্ত্রী। এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব বা তার মনোনীত অন্যূন যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা এর সদস্য হবেন।
এছাড়া বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশেনের সভাপতি, মানবাধিকার ও সমাজসেবায় জড়িত এমন সংগঠনের তিনজন, দুই জন শ্রমিক প্রতিনিধি- যার মধ্যে এক জন চা শ্রমিক হবেন, বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের চারজন প্রতিনিধি, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর একজন প্রতিনিধি, দলিত সম্প্রদায়ের একজন প্রতিনিধি এর সদস্য হবেন। লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের একজন যুগ্ম-সচিব এর সদস্য সচিব হবেন।
প্রতি তিন মাসে এ কমিটিকে কমপক্ষে একটি বৈঠক করতে হবে।
বিলে বলা হয়েছে, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের অধীনে একটি বৈষম্য বিরোধী সেল থাকবে বলে প্রস্তাবিত আইনে বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া বৈষম্য বিরোধী জাতীয় ও স্থানীয় কমিটি গঠনেরও বিধান রাখভা হয়েছে।
বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ধর্ম, বর্ণ, গোত্র জাতি, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, ভাষা, বয়স, লিঙ্গ, শারীরিক, মানসিক বা তৃতীয় লিঙ্গ, জন্মস্থান, জন্ম, পেশা এবং অস্পৃশ্যতার অজুহাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিচের কাজগুলো করলে তা বৈষম্যমূলক কাজ বলে গণ্য হবে।
কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সর্বসাধারণের স্থলে প্রবেশ বা উপস্থিতিতে বাধা প্রদান, নিয়ন্ত্রণ অথবা সীমাবদ্ধতা আরোপ করা; সরকারি আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত বা বেসরকারি অফিসের সেবা প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত করা; কোনো পণ্য বা সেবা আইনানুগভাবে উৎপাদন, বিক্রয় অথবা বিপণন করতে বাধা দেওয়া বা আইনে নির্ধারিত কোনো সুবিধা বা পণ্য বা সেবা গ্রহণে নিয়ন্ত্রণ ও সীমাবদ্ধতা আরোপ করা; উপযুক্ত কারণ ব্যতীত পিতা-মাতার পরিচয় প্রদানে অমর্থতার কারণে কোনো শিশুকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করতে অস্বীকৃতি বা অমত বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি বা বাধা দেওয়া বা সমান সুযোগ-সুবিধা প্রদান বা অবস্থানের ক্ষেত্রে পার্থক্য, বঞ্চনা, বিধি-নিষেধ আরোপ, সীমাবদ্ধকরণ, শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন অথবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার বা অন্য যে কোনো ধরনের বৈমষ্য করা; প্রতিবন্ধী বা তৃতীয় লিঙ্গের হওয়ার কারণে কোনো শিশুকে পরিবারে প্রতিপালন না করে বিশেষ কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা বা প্রতিবন্ধিতার অজুহাতে পরিবারে বসবাসে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা; কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে কোনো বৈধ পেশা বা চাকরি গ্রহণ বা বৈধ ব্যবসা পরিচালনা থেকে নিষিদ্ধ করা; কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে কোনো উৎসব বা অনুষ্ঠানের আয়োজন ও তাতে প্রবেশ ও অংশ নেওয়ার বা নিজস্ব ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রবেশ ও অংশগ্রহণ বা নিজ ধর্ম অনুযায়ী দাফন বা শেষকৃত্য বা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া বা সৎকার সম্পাদন ও যোগদানে বাধা প্রদান করা; সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত বা বেসরকারি চাকরিতে নিয়োগ, ছুটি, পদোন্নতি, বদলি, বেতন-ভাত-মজুরি বা সুযোগ-সুবিধাদি প্রাপ্তিতে পার্থক্য, বঞ্চনা, বিধি-নিষেধ আরোপ, সীমাবদ্ধকরণ বা পদত্যাগ করতে বাধ্য করা বা চাকরিচ্যুত করা; কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে বাড়ি ভাড়া না দেওয়া বা বসবাসের স্থান প্রদানে অস্বীকৃতি বা অমত প্রদান করা বা আবেদন অনুমোদন না করা বা কঠিন শর্ত আরোপ করা; কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে তার বা তাদের বাসস্থানের অভ্যন্তরে প্রবেশে বাধা দেওয়া, বাসস্থান বা এলাকা থেকে উচ্ছেদ বা এলাকা বা বাসস্থান ত্যাগে বাধ্য করা; গ্রাম্য সালিস বা সামাজিকভাবে বা ধর্মীয়ভাবে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে এক ঘরে করা, সামাজিকভাবে বয়কট করা বা হয়রানি করা; তালাকপ্রাপ্ত, বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্তা অথবা বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে বৈষম্যমূলক আচরণ করা; কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে কোনো ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বা রীতি-নীতি পালন করা থেকে বিরত রাখা বা তাদের অন্য কোনো ধর্ম গ্রহণ ও পালন বা ত্যাগ করতে বাধ্য করা; কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে আইনানুগভাবে সম্পত্তি অর্জনে ও হস্তান্তরে বাধা প্রদান করা এবং সম্পত্তিতে অধিকার বা উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা; অথবা স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা।
প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, কোনো বৈষম্যমূলক কাজ ঘটলে সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগী বা ঘটনা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটিতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে পারবে। জেলা কমিটি ৩০ দিনের মধ্যে ঘটনা তদন্ত করবে। ঘটনা প্রমাণ হলে অভিযুক্তর সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিকারের ব্যবস্থা করবে।
জেলা কমিটি প্রতিকার করতে না পারলে বিভাগীয় কমিটির কাছে অভিযোগ জানানো যাবে। এ কমিটি ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত ও প্রতিকারের ব্যবস্থা করবে। না করলে অভিযোগকারী জাতীয় কমিটির কাছে অভিযোগ দায়ের করতে পারবে। এ কমিটি ৪৫ দিনের মধ্যে প্রতিকারের ব্যবস্থা করবে।
জাতীয় কমিটি যদি প্রতিকার করতে না পারে তবে আদালতে মামলা দায়ের করা যাবে। বিলে বলা হয়েছে, দেওয়ানি কার্যবিধিতে যাই থাকুক না কেন মামলা দায়েরের পর ৯০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করতে হবে। প্রয়োজনে আরও ১৫ দিন সময় পাবে আদালত।
আদালত যথাযথ প্রতিকারের আদেশ এবং প্রয়োজনে আর্থিক জরিমানা আরোপ করতে পারবে।