নিত্যপণ্যের মূল্য চিত্র সংসদে তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েকটি নিত্যপণ্যের টিসিবি, বর্তমান ও পূর্বের বাজারমূল্যের একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেছেন। বুধবার (৬ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে সরকারি দলের কাজিম উদ্দিন আহমেদের প্রশ্নের জবাবে সরকার প্রধান এ চিত্র তুলে ধরেন।

শেখ হাসিনা বলেন, করোনা মহামারিতে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দার কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে সব দেশেই দ্রব্যমূল্য ভীষণভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে যুক্ত হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এর কুফল হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে জনবান্ধব বর্তমান সরকার দেশের নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সম্ভাব্য সব রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

universel cardiac hospital

সরকার প্রধান এ সময় নিত্যপণের মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান, টিসিবির বিক্রি কার্যক্রম চলমান থাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারমূল্য উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।

এ সময় নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের কার্যক্রমের ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রয়েছে। পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকবে বলে আশা করি।

প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি নিত্যপণ্যের টিসিবি, বর্তমান ও পূর্বের বাজারমূল্যের একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রীর তথ্য মতে, গত ১ মার্চ সয়াবিন তেলের এক লিটার ক্যানের বাজার মূল্য ছিল ১৭০ টাকা, ৫ এপ্রিল এর মূল্য কমে হয়েছে ১৬১ টাকা ৫০ পয়সা, এ সময়ে সয়াবিন খোলা প্রতি লিটার ১৭৫ টাকা থেকে কমে ১৫৫ টাকা এবং পাম ওয়েল লিটার প্রতি ১৫৮ টাকা থেকে কমে ১৪২ টাকা হয়েছে। এ সময় টিসিবি প্রতি লিটার ক্যান বিক্রি করেছে ১১০ টাকা করে।

মশুর ডালের কেজি ১ মার্চের ১২০ টাকা থেকে কমে ৫ এপ্রিল হয়েছে ১১২ টাকা ৫০ পয়সা। এ সময়ে টিসিবি বিক্রি করছে ৬৫ টাকায় কেজি। খোলা চিনি প্রতি কেজি ১ মার্চের ৮৫ টাকা থেকে কমে ৫ এপ্রিল ৭৮ টাকা হয়েছে। এ সময়ে টিসিবি বিক্রি করছে ৫৫ টাকা। ছোলা কেজিপ্রতি ১ মার্চের ৭৭ টাকা থেকে কমে ৫ এপ্রিল ৭২ টাকা ৫০ পয়সায় এসেছে। এ সময়ে টিসিবি বিক্রি করেছে কেজি ৫০ টাকায়। পেঁয়াজ ১ মার্চের ৬০ টাকা কেজি থেকে কমে ৫ এপ্রিল ৩১ টাকা ৫০ পয়সা হয়েছে। টিসিবি বিক্রি করছে ২০ টাকা কেজি ধরে।

নওগাঁ-২ আসনের শহীদুজ্জমান সরকারের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকারের সাহসী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য পদ্মা সেতু হতে যাচ্ছে। এটি ইতিহাসে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং প্রকল্পগুলোর একটি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পের উভয় প্রান্তে অ্যাপ্রোচ রোড ও সার্ভিস এরিয়ার কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। মূল সেতুর ভৌত অগ্রগতি ৯৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। বর্তমানে সেতুতে কার্পেটিং, ভায়াডাক্ট কাপের্টিং, ওয়াটারপ্রুফ মেমব্রেন, মূল সেতু ও ভায়াডাক্টের মুভমেন্ট জয়েন্ট, ল্যাম্পপোস্ট, অ্যালুমিনিয়াম রেলিং, গ্যাসের পাইপলাইন, ৪০০ কেভিএ বিদ্যুৎ এবং রেললাইন নির্মাণের কাজ চলমান। ২০২২ সালের শেষ নাগাদ পদ্মা সেতু চলাচল করতে উন্মুক্ত করে দেওয়ার জন্য কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের সংশোধিত ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা বলে তিনি জানান।

নোয়াখালী-২ আসনের মোরশেদ আলমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিনামূল্যে কোভিড টিকা দেওয়ার শুরু থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকার ২৯ কোটি ৬৪ লাখ ৮৪ হাজার ১২০ ডোজ টিকা সংগ্রহ করেছে। এ পর্যন্ত ১২ কোটি ৮০ লাখ ৭০ হাজার ৯৪৮ জনকে প্রথম ডোজ এবং ১১ কোটি ৪২ লাখ ৬৭ হাজার ৯৫৬ জনকে দ্বিতীয় ডোজসহ মোট ২৪ কোটি ২৩ লাখ ৩৮ হাজার ৯০৪ জনকে দুই ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এক কোটি ৮১ হাজার ১৯৩ জনকে বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়েছে।

টিকার মূল্য সংক্রান্ত ওই সংসদ সদস্যের প্রশ্নের জবাবে সরকার প্রধান জানান, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে নেগোসিয়েশন (আলোচনা) করে বিশ্ববাজারে প্রচলিত দরের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম মূল্যে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে টিকা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। তবে টিকা কেনার ক্ষেত্রে নন-ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট থাকায় টিকার মূল্য বা এ সংক্রান্ত ব্যয় প্রকাশ করা সমীচীন হবে না।

সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৭৬ লাখ ৭০ হাজার ৩৯৯ জন কর্মী বিদেশ গিয়েছে। করোনা অতিমারির সময়েও ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৯৫৫ জন কর্মী বৈদেশিক কর্মসংস্থান লাভ করেছেন।

লক্ষ্মীপুর-২ আসনের নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশের বয়স্কগোষ্ঠীকে টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় এনে তাদের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত একটি আইন প্রণয়ন ও ওই আইনের আওতায় একটি কর্তৃপক্ষ গঠনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

শেয়ার করুন