আগামী বছরের জুনে প্রথমবারের মতো ঢাকা-কক্সবাজার পথে দ্রুতগতির ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ার আশা করা হচ্ছে।
এ বছরের ডিসেম্বরে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রেলপথ মন্ত্রণালয়। গত মার্চ পর্যন্ত দোহাজারী-কক্সবাজার ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে ৬৯ শতাংশ। ফলে ডিসেম্বরের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে আগামী বছরের জুনে ট্রেন চালুর লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি সরকারের অগ্রাধিকার (ফাস্ট ট্র্যাক) প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত।
২০১০ সালে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং কক্সবাজার থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প নেওয়া হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে প্রথমে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। কক্সবাজার থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার অংশের কাজ হচ্ছে না। মিয়ানমার সম্মত নয় বলে সরকার এই অংশের কাজ পরে বাস্তবায়ন করবে।
২০১৩ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা ছিল। ঠিকাদার নিয়োগ করা হয় ২০১৭ সালে। তখন প্রকল্পের কাজ শেষ করার সময়সীমা ঠিক করা হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। এখন আরও এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, শুরুতে ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা সৃষ্টি হয়। প্রায় ১৫ কিলোমিটার রেললাইন যাচ্ছে সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে। ফলে নানা বিধিনিষেধে কাজ করতে হয়েছে। এ ছাড়া বৈদ্যুতিক খুঁটি সরাতে সময় লেগেছে। এ জন্য কাজে কিছুটা সময়ক্ষেপণ হয়েছে বলে অগ্রগতি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় অর্জিত হয়নি। তিনি বলেন, এখন সেভাবে আর জটিলতা নেই। আগামী বছরের জুনে রেলপথ ট্রেন চলাচল উপযোগী হয়ে যাবে।
দুই ভাগে প্রকল্পের কাজটি সম্পন্ন হচ্ছে। একটি অংশ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। আরেকটি অংশ করছে চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড।
প্রকল্পের প্রথম ভাগ দোহাজারি থেকে চকরিয়া পর্যন্ত। দ্বিতীয় ভাগ চকরিয়া থেকে কক্সবাজার। চকরিয়া থেকে কক্সবাজার অংশে ২০টি সেতুর মধ্যে ১৭টির কাজ শেষ হয়েছে। কালভার্টের কাজ প্রায় শেষ। সাড়ে ১২ কিলোমিটার পথে রেললাইনও বসানো হয়েছে। তবে দোহাজারি-চকরিয়া অংশে কাজ কিছুটা পিছিয়ে আছে। এই অংশে ১৯টি সেতুর মধ্যে ৩টির কাজ পুরোপুরি সমাপ্ত হয়েছে। বাকিগুলোর নির্মাণকাজ চলমান আছে।
৯০ বছর আগে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে রেললাইন নির্মাণ করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা দোহাজারীতে গিয়ে থেমে যায়। বর্তমান দোহাজারী-কক্সবাজার ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য, পর্যটননগরী কক্সবাজারে যাতায়াত সহজ করা। পাশাপাশি মিয়ানমারসহ ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে বাংলাদেশকে যুক্ত করা।
ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণের প্রাথমিক লক্ষ্য পর্যটক। তাই পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কক্সবাজারে নির্মিত হচ্ছে দেশের আইকনিক রেলস্টেশন। কক্সবাজারের ঐতিহ্য ধরে রাখতে স্টেশনটি হচ্ছে ‘ঝিনুকের’ আকৃতিতে। পর্যটকেরা চাইলে নিজেদের লাগেজ স্টেশনের লকারে রেখে সমুদ্রস্নানে চলে যেতে পারবেন। এতে হোটেল ভাড়া না করে রাতের ট্রেনে ফিরে আসার সুযোগ পাবেন পর্যটক ও যাত্রীরা।