দেশের ৩২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক পর্যায়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর নতুন করে গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা অংশ নেবে কিশোরগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তত্ত্বাবধানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে আসন্ন ভর্তি পরীক্ষা ও সংশ্লিষ্ট এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সভা সূত্রে জানা গেছে, ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ সভা করে চূড়ান্ত করবে। এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রের বাইরে বিভিন্ন কলেজে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। তবে, গুচ্ছের বাইরে থাকা আটটি বিশ্ববিদ্যালয়- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটি নিজেদের মতো ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করবে।
সভায় গুচ্ছের বাইরে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে দ্রুত ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি, ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ, ফলাফল ও ভর্তির সময় প্রকাশ করা, কেন্দ্রীয়ভাবে সাবজেক্টের প্লেসমেন্ট করা, বিভাগ পরিবর্তনের সময় নির্ধারণ, ভর্তি ফি’র সুপারিশ করে ইউজিসি। ইউজিসির পক্ষ থেকে ভর্তি পরীক্ষার ফি ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা কমানো পরামর্শ দেওয়া হয়।
এছাড়া, কোন সিলেবাসে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে ও দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব) প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগমের সভাপতিত্বে কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর, প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ, প্রফেসর ড. মো. আবু তাহের, কমিশনের সচিব ড. ফেরেৌস জামান, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ জামিনুর রহমানসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভায় ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপাচার্যদের মনোনীত প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া উপাচার্যরা গুচ্ছের বাইরে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব দিয়ে এ প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান।
প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বলেন, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়কে সাহসী ভূমিকা পালনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার বাইরে থাকা আট বিশ্ববিদ্যালয়কে গুচ্ছ পদ্ধতিতে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হবে। এক্ষেত্রে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
তিনি বলেন, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য ভারতের ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সির আদলে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।
প্রফেসর আলমগীর বলেন, গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়াতে হবে। গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় কেন্দ্র নির্বাচন, কেন্দ্রীয়ভাবে বিভাগের প্লেসমেন্ট করা ও যৌক্তিকভাবে ভর্তি পরীক্ষার ফি নির্ধারণের পরামর্শ দেন।
এছাড়া বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটি গত বছর গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় আসার জন্য সময় চেয়েছিল। কিন্তু এ বছর ইউজিসিকে না জানিয়ে তারা ভর্তি পরীক্ষা সময়সূচি প্রকাশ করায় সভায় এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে সমালোচনা করা হয়।
সভায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ শতভাগ লাঘব হয়েছে। কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও এ পদ্ধতিতে পরীক্ষার সফলতার মাত্রা ৮০ শতাংশ। এ বছর ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি সহজ করা হবে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বিভিন্ন কলেজে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার থাকতে অনীহা প্রকাশ করেছে। এক্ষেত্রে, তিনি ইউজিসিকে গুচ্ছ পদ্ধতিতে অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এ প্রক্রিয়ায় ধরে রাখতে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।