উপাচার্য নিয়োগে যে পদ্ধতির প্রস্তাব করবে ইউজিসি

হাসান শান্তনু

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় উপাচার্য নিয়োগে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা দরকার বলে মনে করছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। নিয়োগপ্রক্রিয়া যেন ‘সম্পূর্ণ স্বচ্ছ’ হয়, তেমন পদ্ধতিতে নিয়োগের প্রস্তাব করবে প্রতিষ্ঠানটি। দলীয় বিবেচনার বাইরে এসে উপাচার্য নিয়োগের বিষয়ে সরকারের কাছে শিগগিরই লিখিত প্রস্তাব করবে তারা।

একই সঙ্গে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষকদেরকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিতে সরকার ইউজিসির মতামত নিতে পারে, এমন কথাও প্রস্তাবনায় থাকছে। আজ শনিবার দুপুরে ইউজিসির সূত্র মত ও পথকে এসব তথ্য জানায়।

universel cardiac hospital

তথ্যমতে, ইউজিসি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানসম্পন্ন শিক্ষা ও গবেষণার উৎকর্ষসাধনসহ উচ্চশিক্ষার সার্বিক বিষয় দেখভালের দায়িত্ব পালন করে। তবে উপাচার্য নিয়োগপ্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠানটির কোনো ধরনের মতামত দেওয়ার সুযোগ নেই।

প্রকৃত শিক্ষাবিদদের উপাচার্য পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য সরকার ইউজিসির মতামত নিলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে উদ্দেশ্যে ইউজিসি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেটি বাস্তবায়ন হবে বলে মনে করেন প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তারা।

অভিযোগ রয়েছে, দলীয় বিবেচনায় বা ব্যক্তি পছন্দের কারণে তুলনামূলকভাবে কম যোগ্য শিক্ষকদেরকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি জাতীয় সংসদেও আলোচনা হয়েছে। বরেণ্য শিক্ষাবিদদের মধ্যে অনেকে স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে কাজ করতে আগ্রহী নন।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সংসদে তা স্বীকার করেন। আস্থার সংকট, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নানা চাপ, স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনের পরিবেশের অভাব, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অসাধু চক্রের দাপটের কারণে আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন শিক্ষকরা উপাচার্যের দায়িত্ব নিতে আগের মতো উৎসাহিত হচ্ছেন না।

এ পদে থেকে অনেকের অনিয়ম, দুর্নীতি করে পার পেয়ে যাওয়া, বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের পরও দলীয় বিবেচনায় তাদেরকে রক্ষার ঘটনাগুলো দেশে উপাচার্যের পদটিকে বিতর্কিত করে তুলছে। এ অবস্থা উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার জন্য ‘অশনি সংকেত’ বলে শিক্ষাবিদরা মনে করেন।

তারা বলেন, কোনো শিক্ষকের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া তার জন্য অনেক সম্মান ও মর্যাদার। দেশে সামরিক শাসনের আমল থেকে শুরু হয় দলীয় বিবেচনায় স্বায়ত্তশাসিত, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্য নিয়োগ। গণতান্ত্রিক সরকারের আমলেও এ ধারার চর্চা চলতে থাকে।

চার দশক ধরে চলমান বিভিন্ন অপকাণ্ডের জের ধরে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যে, অনেকে উপাচার্যের দায়িত্ব নিয়ে ‘বিব্রতকর অবস্থার’ মুখোমুখি হতে চান না। প্রসঙ্গত, বর্তমানে দেশে ৫০টির বেশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।

ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর এসব প্রসঙ্গে বলেন, ‘অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের কোনো সুস্পষ্ট নীতিমালা নেই। কীভাবে একজন উপাচার্য হবেন, সে প্রক্রিয়াও স্বচ্ছ নয়। সুস্পষ্ট নীতিমালার মাধ্যমে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হলে এ নিয়ে বিতর্ক বন্ধ হবে।’

উপাচার্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় যুগের পর যুগ ধরে অনিয়ম ও দুর্নীতি চলে আসছে বলে অভিযোগ আছে। রাজনৈতিক পরিচয়ে উপাচার্য হওয়া শিক্ষক বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে গুরুত্ব দেন না। ‘ক্ষমতাবান’ এসব উপাচার্যের বিরুদ্ধে ক্ষমতাহীন ইউজিসি কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না।

সরকার বললে শুধু তদন্ত করে সুপারিশ করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে সেই তদন্তও আলোর মুখ দেখে না। এমনকি তদন্ত করতে গিয়ে উপাচার্যের চাপে ইউজিসির তদন্ত দলের ফিরে আসার ঘটনাও আছে।

জানা যায়, উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া ও তাদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার আচার্যের। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের পরামর্শও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্যের (রাষ্ট্রপতি) সাচিবিক কাজটি করে থাকে। ফলে রাষ্ট্রপতি ও সরকারের শীর্ষ পর্যায়কে এসব বিষয় অবহিত করার মূল দায়িত্ব মন্ত্রণালয়ের।

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইউজিসির সদস্য মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত উপাচার্যরা যদি বিধিবিধান মেনে যথাযথভাবে তাঁদের অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন, তাহলে বিদ্যমান পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো অভিযোগ উঠলে তা সঙ্গে সঙ্গে প্রতিকারের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে কোনো ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হবে না।’

শেয়ার করুন