‘হৃদয় মণ্ডলকে মুক্তি না দিলে আমাকেও যেন গ্রেপ্তার করা হয়’

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, ‘শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে সসম্মানে মুক্তি দিতে হবে। নইলে আমাকেও যেন গ্রেপ্তার করা হয়।’ ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন।

জাফর ইকবাল বলেন, ‘হৃদয় মণ্ডলের সঙ্গে যা হয়েছে, তা আমার জন্য অত্যন্ত দুঃখের। দুঃখের এই কারণে যে, আমি শিক্ষকতা জীবনে বিজ্ঞানই পড়িয়েছি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে। আরও বেশি দুঃখের কারণ এই জন্য যে, দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বইটি সম্পাদনার সঙ্গে আমি জড়িত। আমার সম্পাদনা বা রচিত একটি বই পড়ান এমন একজন শিক্ষককে কারাগারে যেতে হয়েছে, এই দুঃখের কোনো শেষ নেই।’

universel cardiac hospital

মুন্সীগঞ্জের বিনোদপুর রাম কুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের সম্পর্কে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আরেক শিক্ষক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘হৃদয় মণ্ডল নিরীহ মানুষ। প্রায় ২১ বছর ধরে তিনি শিক্ষকতা করেন। এর আগে কখনোই তাঁর বিরুদ্ধে এই ধরনের কোনো অভিযোগ শুনিনি।’

মুন্সীগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসার বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। শিক্ষক ও ছাত্রদের কথোপকথন পূর্বপরিকল্পিতভাবে রেকর্ড করা হয়েছে, তা বোঝা গেছে। এর বেশি বলার মতো আপাতত কিছু নেই।’

প্রসঙ্গত, গত ২০ মার্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয়পত্রের শ্রেণি শিক্ষক অনুপস্থিত ছিলেন। এ কারণে গণিত ও বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে ওই ক্লাসে পাঠানো হয়। তিনি বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক নিয়ে ক্লাসে আলোচনা করেন। আলোচনার সময় গোপনে তাঁর বক্তব্যের অডিও ধারণ করা হয়। সেই অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়।

এতে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার সময় কয়েকজন ছাত্রকে বারবার ধর্মের প্রসঙ্গ টেনে প্রশ্ন করতে শোনা যায়। হৃদয় মণ্ডল ধর্মকে ‘বিশ্বাস’ এবং বিজ্ঞানকে ‘প্রমাণভিত্তিক জ্ঞান’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। পরে কিছু শিক্ষার্থী অভিযোগ করলে প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহমেদ ওই শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে তিনদিনের মধ্যে জবাব দিতে বলেন। তবে এর আগেই ২২ মার্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা শাস্তির দাবিতে স্কুলে মিছিল বের করেন।

প্রধান শিক্ষক বিষয়টি সদর থানা ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানোর পর পুলিশ হৃদয় মণ্ডলকে আটক করে। এরপর ইসলাম ধর্মকে অবমাননার অভিযোগে গত ২২ মার্চ হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলা করেন বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মো. আসাদ। সেই মামলায় তিনি এখন কারাগারে আছেন।

শেয়ার করুন