২০২৫ সাল নাগাদ ভোলার দুই গ্যাসক্ষেত্রে দ্বিগুণ উৎপাদনের পরিকল্পনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোলা প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র। ছবি : সংগৃহীত

ভোলায় গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয় ১৯৯৫ সালে। এরপর ২০১৮ সালে আরো একটি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার হয়। দুটি গ্যাসক্ষেত্রে মোট উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুদ রয়েছে এক ট্রিলিয়ন ঘনফুটের কিছু বেশি। মূল ভূখণ্ড থেকে ভোলা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এবং সেখানে গ্যাসের পর্যাপ্ত চাহিদা না থাকায় গ্যাসের ব্যবহার বাড়াতে পারেনি জ্বালানি বিভাগ। ভোলার গ্যাসকে কাজে লাগাতে ২০৪১ সাল নাগাদ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

জ্বালানি বিভাগের এক পরিকল্পনায় দেখা গেছে, ভোলায় বর্তমানে যে পরিমাণ গ্যাস উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে, আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ তা আরো বাড়ানো হবে। এজন্য শাহবাজপুর ও ভোলা নর্থ গ্যাসক্ষেত্রে আরো তিনটি কূপ খননের কাজ চলমান রয়েছে। ফলে বর্তমানে দৈনিক ১৩০-১৪০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ ২৫০-২৬০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হবে।

universel cardiac hospital

সম্প্রতি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে জ্বালানি বিভাগের পক্ষ থেকে এ সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন দেয়া হয়। সেখানে ভোলায় আবিষ্কৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ, উত্তোলন ও ব্যবহারের বিষয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা জানায় জ্বালানি বিভাগ।

এর আগে ভোলায় গ্যাসের মজুদ ও উত্তোলন নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। গ্যাসের মজুদ কম বিবেচনায় অবকাঠামো নির্মাণে আর্থিক লাভবান না হওয়ার কারণে সেসব পরিকল্পনা কাজে লাগাতে পারেনি জ্বালানি বিভাগ। তবে এবার নতুন গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম এবং কূপ খনন করে গ্যাসের মজুদ যথেষ্ট থাকলে তা পাইপলাইনের মাধ্যমে জাতীয় গ্যাস গ্রিড লাইনে আনা হবে বলেও জানায় পেট্রোবাংলা।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বণিক বার্তাকে বলেন, ভোলায় আরো তিনটি কূপ খনন কার্যক্রম চলছে। সেসব কূপে গ্যাস রিজার্ভের পরিমাণ ভালো থাকলে পাইপলাইন নির্মাণ করে সেখানকার গ্যাসকে মূল ভূখণ্ডে আনার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। তবে রিজার্ভের পরিমাণ কম হলে পাইপলাইন নির্মাণ আর্থিকভাবে লাভজনক হবে না। সব দিক বিবেচনা করেই আমরা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নেব। তবে আমরা আশাবাদী এখানে বেশ ভালো পরিমাণ গ্যাসের রিজার্ভ মিলবে।

ভোলায় বর্তমানে বৃহদাকারের দুটি গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে। এর একটি ভোলার শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র, অন্যটি ভোলা নর্থ। এ দুই কূপে মোট ১ হাজার ৫৩৯ বিসিএফ গ্যাসের মজুদ রয়েছে। তবে দুটি গ্যাসক্ষেত্রে উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুদ রয়েছে এক টিসিএফের কিছু বেশি।

ভোলায় আবিষ্কৃত মজুদ গ্যাসের মধ্যে শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১১৫ বিসিএফ গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। বর্তমানে গ্যাসক্ষেত্রটি থেকে দৈনিক ১২০-১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। এখনো ওই গ্যাসক্ষেত্রে ৫২৪ বিসিএফ গ্যাসের মজুদ রয়েছে।

এছাড়া ভোলা নর্থে গ্যাসের মজুদ রয়েছে ৪৫৩ বিসিএফ। এ গ্যাসক্ষেত্রে প্রসেস প্লান্ট বসানোর কাজ শেষ হলে সেখান থেকে দৈনিক ২০ মিলিয়ন ঘনফুট উৎপাদন করা যাবে। ফলে ভোলার দুটি গ্যাসক্ষেত্র থেকে দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়াবে ১৩০-১৪০ মিলিয়ন ঘনফুট।

তবে ভোলায় বর্তমানে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৬০-৬৫ মিলিয়ন ঘনফুট। আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ শাহবাজপুর এবং ভোলা নর্থ গ্যাসক্ষেত্রে আরো তিনটি কূপ খনন করলে মোট উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়াবে ২৫০-২৬০ মিলিয়ন ঘনফুটে। তবে এ পরিমাণ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো হলেও তা ব্যবহারের ক্ষেত্র নেই সেখানে।

বর্তমানে ভোলায় দৈনিক যে গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে তা সেখানকার চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্র, পাঁচটি শিল্প, দুটি ক্যাপটিভ পাওয়ার, দুটি বাণিজ্যিক ও ২ হাজার ৩৭২টি আবাসিক গ্রাহককে সরবরাহ করছে সুন্দরবন গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লিমিটেড।

জ্বালানি বিভাগের প্রতিবেদন বলছে, ভোলার গ্যাসকে বর্তমানে পাঁচ শ্রেণীর গ্রাহক ব্যবহার করছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির গড় গ্যাসের ব্যবহারে দেখা গেছে, যে ৬৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ব্যবহূত হচ্ছে তার মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৫৯ দশমিক ৯০ এমএমসিএফডি, শিল্পে ৩ দশমিক ২৬, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ১ দশমিক ৩৯ এবং বাকিটা বাণিজ্যিক ও আবাসিকে ব্যবহার হচ্ছে।

জেলাটি জাতীয় গ্যাস গ্রিডের বাইরে থাকায় এ দুটি গ্যাসক্ষেত্রের উৎপাদিত গ্যাস দেশের অন্য অঞ্চলে সরবরাহ করা যাচ্ছে না। তবে ভোলাকে জাতীয় গ্যাস গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য একটি ফিজিবিলিটি স্টাডি বর্তমানে চলমান রয়েছে।

গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) ভোলা থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে জাতীয় গ্যাস গ্রিডে যুক্ত করার জন্য ১. ভোলা থেকে বরিশাল এবং ২. শাহবাজপুর থেকে ফেনী স্টাডি দুটির মধ্যে তুলনামূলকভাবে গ্রহণযোগ্য সুপারিশ অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।

শেয়ার করুন