তিন দফা দাবিতে পদযাত্রা : গণভবনে স্মারকলিপি দিলেন সোহেল তাজ

মোহাম্মদ সজিবুল হুদা

ঐতিহাসিক ১০ই এপ্রিল বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠনের দিনটিকে ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ ঘোষণাসহ ৩ দফা দাবিতে সংসদ ভবন এলাকা থেকে পদযাত্রা করে গণভবনে গেছেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের পুত্র ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ। সেখানে তিনি তাঁর তিন দফা দাবিতে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তাঁর প্রতিনিধিরা এই স্মারকলিপি গ্রহণ করেন বলে গণভবন থেকে বের হয়ে জানিয়েছেন সোহেল তাজ।

আজ রোববার বিকেল চারটা ২০ মিনিটে মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে গণভবনের উদ্দেশ্যে পদযাত্রা শুরু করেন তিনি। বিকাল সাড়ে চারটার দিকে তিনি গণভবনের ফটকে পৌঁছান। সেখানে কিছু সময় অপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেন। এ সময় সোহেল তাজের সঙ্গে ছিলেন তাঁর বড় বোন শারমিন আহমদ রিপি, মেজো বোন গাজীপুর-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমিসহ বিভিন্ন বয়সী কয়েক শ মানুষ।

সোহেল তাজের দাবিগুলো হলো-

১. যেহেতু ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয়, সেহেতু বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র (প্রজাতন্ত্র) হিসেবে জন্ম লাভ করে এই দিনে। তাই এই দিনটিকে ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ ঘোষণা করতে হবে।

২. ৩ নভেম্বর জেল হত্যা দিবসকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষণা করে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করতে হবে।

৩. জাতীয় চার নেতাসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের সব বেসামরিক ও সামরিক সংগঠক, পরিচালক, অমর শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম, অবদান ও জীবনীসহ মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস যথাযথ মর্যাদা ও গুরুত্বের সঙ্গে সর্বস্তরের পাঠ্যপুস্তকে এবং সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে তিন দফা দাবিতে একাই রাজপথে নামার ঘোষণা দিয়েছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি একটি জরিপে উঠে এসেছে, জাতীয় চার নেতার নাম জানে না একজন শিক্ষার্থীও। জানে না মুক্তিযুদ্ধে কতজন শহীদ হয়েছেন। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর নাম কী, সে উত্তর দিতে পারেন নি তারা। এমনকি মুক্তিযুদ্ধ আওয়ামী লীগ সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে বলেও ধারণা অনেকের।

গত ২ এপ্রিল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স (বিলিয়া) মিলনায়তনে আয়োজিত ‘বিজয়ের ৫০ বছর : পাঠ্যপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধ-বাস্তবতা ও করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে উপস্থাপন করা গবেষণাপত্রে এ তথ্য উঠে আসে।

গবেষণাটি ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর-ডিসেম্বরে টঙ্গী এলাকার সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নিয়ে করা হয়। এতে অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ১০৫ জন শিক্ষার্থী এতে অংশ নেয়।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, মোট ২০টি প্রশ্নের মধ্যে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের জবাব দেয়া ১৫টি প্রশ্নের ক্ষেত্রে ভুল উত্তরের হার বেশি। শিক্ষার্থীরা শহীদ বলতে শুধু সালাম, রফিক, জব্বার ও বরকতকেই বোঝে। প্রথম সরকার সম্পর্কে কিছুই বলতে পারে না। স্বাধীনতাবিরোধীদের সম্পর্কে কিছুই বলতে পারে না। জাতীয় চার নেতার নাম বলো, এর জবাবে শতভাগ শিক্ষার্থী ভুল উত্তর দিয়েছে। পৃথক উত্তরে তারা বলে, বঙ্গবন্ধু, জিয়াউর রহমান, শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া ও এইচ এম এরশাদ জাতীয় চার নেতা। ৩ নভেম্বর সম্পর্কেও শতভাগ শিক্ষার্থী ভুল উত্তর দিয়েছে। ৫৭ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তরে বলে, মুক্তিবাহিনী, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল।

শেয়ার করুন