১০ এপ্রিলকে ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ ঘোষণার দাবি বাস্তবায়ন হবে কবে?

হাসান শান্তনু

১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিলের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের ভিত্তিতে মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়। স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আইনের সংজ্ঞা অনুযায়ী মুজিবনগর সরকার গঠনের সক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে একটি রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য অর্জন করে। জাতীয় জীবনে যে দিবসগুলো গভীর তাৎপর্য বহন করে, সেগুলোর মধ্যে ১০ এপ্রিল অন্যতম। দিনটিকে ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ হিসেবে ঘোষণার দাবি গত কয়েক বছর ধরে জানিয়ে আসছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা।

তাঁরা বলছেন, ভারত ও পাকিস্তান যেদিন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন প্রজাতন্ত্রের মর্যাদা লাভ করে, সেদিনকে তারা প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। বিভিন্ন দেশে স্বাধীনতা দিবস ও সংবিধান প্রবর্তন দিবস ইত্যাদি ছাড়াও প্রজাতন্ত্র দিবস পালিত হয়। আমাদের স্বাধীনতা দিবস’, বিজয় দিবস থাকলেও প্রজাতন্ত্র দিবস নেই।

universel cardiac hospital

১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি গণপ্রজাতন্ত্র হয়েছে। তাই দিনটিকেই প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে বিবেচনা করা যায়।

তাঁদের মতে, আমাদেরও ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ বহাল তবিয়তে বর্তমান আছে। শুধু সরকারিভাবে ঘোষণা দেওয়ার অপেক্ষায়। সে দিনটি হচ্ছে- ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল। যে কোনো স্বাধীন রাষ্ট্রের একটি প্রজাতন্ত্র দিবস থাকা জরুরি। তাছাড়া মুজিবনগর সরকার গঠনের যে গুরুত্ব, তা হারিয়ে যাচ্ছে। ইতিহাসে এ সরকার এবং সরকার গঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বাঁচিয়ে রাখতেই দিবসটি প্রয়োজন।

মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতা—মুজিবনগর সরকারের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে যেভাবে সম্মান জানানো উচিত ছিল, সেভাবে সম্মান জানানো হচ্ছে না।

দিবসটি সামনে এলে নাগরিকের সমতা, সামাজিক ন্যায়বিচারসহ মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধগুলো শুধু সংবিধানে না থেকে প্রাত্যহিক জীবনে চর্চার অংশ হতে পারবে বলে তাঁরা মনে করেন।

অন্যদিকে প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠনের দিন ১০ এপ্রিলকে ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ ঘোষণাসহ তিনদফা দাবি নিয়ে হেঁটে গণভবনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন আওয়ামী লীগের সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে সোহেল তাজ। গত ৭ এপ্রিল নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায় এসব দাবি ও প্রতিবাদ কর্মসূচির ঘোষণা দেন তিনি।

ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘১০ এপ্রিল ২০২২, রোববার বিকেল ৪টায় জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে (দক্ষিণ দিকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ সংলগ্নে) আমি অবস্থান নেব। সংসদ ভবনের সামনে থেকে (মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ) বিকেল ৪টায় গণভবনের উদ্দেশে হেঁটে যাত্রা শুরু করব।’

তাঁর দাবি, ‘১০ এপ্রিল প্রথম সরকার গঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র (প্রজাতন্ত্র) হিসেবে জন্ম নিলো। তাই দিনটিকে প্রজাতন্ত্র দিবস ঘোষণা করতে হবে।’

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের রচয়িতা ও ‘ইনস্টিটিউট অব ল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের’ (বিলিয়া) চেয়ারম্যান এম আমীর-উল ইসলামের উদ্যোগে গত বছর আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আলোচকরা ১০ এপ্রিলকে ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ হিসেবে ঘোষণা ও স্বীকৃতির জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান।

গত বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) পাঁচটি লক্ষ্য সামনে রেখে পরিকল্পনা ও কর্মসূচি গ্রহণ করে। সেগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় দাবিটি ছিল ঐতিহাসিক ১০ বা ১৭ এপ্রিলকে ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা।

গতকাল শনিবার বিকেলে নোয়াখালী জেলা জেএসডির প্রতিনিধি সভায় দেওয়া প্রধান অতিথির বক্তব্যে আ স ম আবদুর রব ১০ এপ্রিলকে প্রজাতন্ত্র দিবস ঘোষণার দাবি জানান।

শেয়ার করুন