করোনা মহামারির কারণে দেশের হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম সেক্টরের ৬০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি এ খাতের প্রায় ১ লাখ ৪১ হাজার মানুষ চাকরি হারিয়েছেন।
রোববার (১০ এপ্রিল) রাজধানী ঢাকার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) মিলনায়তনে ‘দ্য কোভিড-১৯ প্যানডেমিক অ্যান্ড দ্য হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম সেক্টর ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কোভিড-১৯ এর কারণে এ খাতে মোট ৬০০ বিলিয়ন টাকার ক্ষতি হয়। মোট ক্ষতির মধ্যে পরিবহনে ৪০ শতাংশ, হোটেলে ২৯ শতাংশ এবং রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁয় ক্ষতি ২৫ শতাংশ। বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মোহাম্মদ ইউনুস প্রতিবেদন উপস্থাপন করে বলেন, আমাদের এই সমীক্ষাটির মাধ্যমে এ খাতের বর্তমান অবস্থা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। কোভিড পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সময়ে এই সেক্টরের বিক্রয় ও রাজস্ব হ্রাস, কর্মীদের ছাঁটাই, কর্মচারীদের উপার্জন কমানোর ক্ষেত্রে তুলনামূলক পর্যালোচনা করা হয়েছে। আমাদের এ সমীক্ষার আওতায় বাংলাদেশের আটটি প্রশাসনিক বিভাগীয় শহর এবং কক্সবাজারে অবস্থিত মোট ২০০টি হোটেল এবং রিসোর্ট (ফাইভ স্টার, ফোর স্টার, থ্রি স্টার, টু স্টার হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ), ১৩৮টি টি ট্রাভেল এজেন্সি এবং ট্যুর অপারেটর এবং ২০০টি রেস্তোরাঁ এবং ৬৩টি পর্যটন কেন্দ্র থেকে তথ্য নিয়ে জরিপ করা হয়েছে।
জরিপ ছাড়াও ২১ জন পরিবহন মালিক ও অপারেটর এবং পর্যটন আকর্ষণ এবং বিনোদন কেন্দ্রের (চিত্তবিনোদন পার্ক) মালিক ও কর্মচারীদের নিয়ে কেস স্টাডিও পরিচালিত হয়েছে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, এই পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার করা সরকারের সহায়তা ছাড়া অসম্ভব। সাব-সেক্টরগুলো প্রধানত দু’টি প্রধান ধরনের সহায়তার তালিকা তৈরি করেছে। প্রণোদনা এবং কম সুদের হারে ঋণের সুবিধা। উপ-খাতগুলোকে কোভিড-১৯ এর বিস্ময়কর প্রতিকূল প্রভাব থেকে সম্পূর্ণরূপে পুনরুদ্ধার করার জন্য সহজ শর্তে আর্থিক প্রণোদনা এবং ঋণ সুবিধার প্রয়োজন বলে মনে করেন। অন্যদিকে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং বেসরকারি খাতকে তাদের ব্যবসা করার সুবিধার জন্য পর্যটন স্থান এবং আশপাশের জনসাধারণের অবকাঠামোর উন্নয়ন অপরিহার্য। সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন যাতে পর্যটক এবং সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থা উভয়ই অপ্রয়োজনীয় ঝামেলা ও হয়রানি এড়াতে পারে। এটা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ যে কর্মচারীরা ন্যায় মজুরি এবং বেতন বাজারের সংকেতের সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং শোষণকারী উদ্যোক্তাদের শিকার না হন।
গবেষণায় বলা হয়েছে, এন্টারপ্রাইজগুলোতে কোভিড-১৯ এর প্রভাব সমীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল-জুন) পুরো খাতে বিক্রয় এবং আয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এই পতন হোটেল এবং রিসোর্টগুলোর জন্য প্রায় ৮৪ শতাংশ এবং ট্যুর অপারেটর এবং ট্রাভেল এজেন্ট এবং বিনোদন পার্কের জন্য ৯৮ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ। বেশিরভাগ এন্টারপ্রাইজে তৃতীয় ত্রৈমাসিক (জুলাই-সেপেটম্বর) থেকে বিক্রয় রাজস্বের উন্নতি হয়েছে যা ২০২১ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে (অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর) আরও উন্নত হয়েছে।
প্রাক-মহামারি বছরের তুলনায় মহামারি বছরে হোটেল এবং রিসোর্টে নিয়োগ করা কর্মীর গড় সংখ্যা ৪২ শতাংশ কম ছিল। কিন্তু কর্মী ছাঁটাই ৩১৭ শতাংশ বেশি ছিল। অন্যদিকে ২০১৯-২০ সালে ট্রাভেল এজেন্সি, ট্যুর অপারেটর এবং পর্যটন এসএমইদের দ্বারা হোটেল এবং রিসোর্ট অপেক্ষা তুলনামূলকভাবে খুব কমই কোনো নিয়োগ এবং ছাঁটাই করা হয়েছিল। রেস্তোরাঁ, পরিবহন সংস্থা এবং বিনোদন পার্কের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভিন্ন হলেও ২০১৯ এবং ২০২০ সালে রেস্তোরাঁ দ্বারা গড়ে দুজনেরও বেশি কর্মী-কর্মচারী নিয়োগ করা হয়েছিল। অন্যদিকে ২০২০ সালে চারজনেরও বেশি কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে যদিও ২০১৯ সালে ছাঁটাই করা হয়নি। বিনোদন পার্কগুলো অন্যান্য সাব-সেক্টরের তুলনায় ২০১৯ সালে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। ২০২০ সালে নিট কর্মসংস্থান সৃষ্টির হার কম ছিল। সমস্ত সাব-সেক্টরে ধারাবাহিকভাবে মহামারি চলাকালীন নেট কর্মসংস্থান হ্রাস পেয়েছে।