নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ‘আমদানি করা’ সরকার ক্ষমতায় আসীন হওয়ার প্রতিবাদে পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন ইমরান খান; যিনি বিরোধী দলীয় এমপিদের অনাস্থা ভোটের কারণে গত শনিবার প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
সোমবার ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) জ্যেষ্ঠ নেতা ও কেন্দ্রীয় সরকারের সাবেক তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধরি পকিস্তানের জাতীয় দৈনিক ডনকে বলেন, ‘আগামী বুধবার (১৩ এপ্রিল) থেকে দেশজুড়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করছি আমরা। দলের প্রথম বিক্ষোভ সমাবেশ হবে পেশোয়ারে।’
সফল ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিতে আসা ইমরান ২০১৮ সালে দুর্নীতিমুক্ত, সমৃদ্ধ, বিশ্বের কাছে শ্রদ্ধা পাওয়ার মতো দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়ে ভোটে জিতে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।
তবে ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে সেনা শাসনে থাকা পাকিস্তানে তার ক্ষমতা আরোহনের নেপথ্যে সেনাবাহিনীর আশির্বাদ ছিল বলেই মনে করা হয়। যার উপর ভর করে বড় দুই দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ও মুসলিম লিগকে (নওয়াজ) হটিয়ে ক্ষমতায় বসেন তিনি।
সম্প্রতি সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গে ইমরানের সম্পর্কের অবনতির মধ্যে বিরোধী দলগুলো জোট বেঁধে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে জাতীয় পরিষদে।
সেটা আটকাতে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার মতো কৌশল ইমরান করলেও পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট তা আটকে দেয়। আদালতের আদেশেই শনিবার মধ্যরাতে অনাস্থা ভোটে ইমরানের বিদায় ঘণ্টা বাজে। তার আগে জাতীয় পরিষদের স্পিকার আসাদ কাইসার ও ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি পদত্যাগ করেন।
পাকিস্তানের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত কোনো সরকার প্রধান মেয়াদ পূর্ণ করতে না পারলেও ইমরানের আগে আর কাউকে অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়নি।
শনিবার ক্ষমতা হারানোর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে প্রথম টুইটেই আন্দোলনের ডাক দিয়েছেলেন ইমরান খান। সেই টুইটবার্তায় তিনি বলেছিলেন, ‘পাকিস্তান ১৯৪৭ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র হয়েছে ঠিকই, কিন্তু স্বাধীন হওয়ার সংগ্রাম আজ শুরু হল, ক্ষমতা পরিবর্তনে বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে। আর সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষার কাজটি বরাবর জনগণই করে আসছে।’
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইতোমধ্যে ইসলামাবাদ, করাচি, পেশোয়ার, লাহোরসহ সব বড় বড় শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ইমরানের সমর্থকরা। রোববার রাতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়েও প্রবাসী পাকিস্তানীদের একাংশ ইমরান খানের সমর্থনে মিছিল করেছেন।
বিক্ষোভ মিছিল করার জন্য দলের সমর্থকদের ধন্যবাদ দিয়ে ইমরান খান, ‘গণতন্ত্রের দাবিতে ও বিদেশীদের সঙ্গে চক্রান্তে লিপ্ত থাকা কুটিলদের বিরুদ্ধে এত বড় স্বতস্ফূর্ত মিছিল পাকিস্তানের ইতিহাসে ঘটেনি। আমি মিছিলে অংশ নেওয়া সব পাকিস্তানিকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
এদিকে, পাকিস্তানের প্রধামন্ত্রীর পদের জন্য ইতোমধ্যে পার্লামেন্ট সচিবালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) (পিএমএল-এন) নেতা শেহবাজ শরিফ ও পিটিআই নেতা শাহ মেহমুদ কুরেশি। সোমবার দুপুর ২টার পর পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্ধারণে ভোট হবে পাকিস্তানের পার্লামেন্ট ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সদস্যদের মধ্যে, যেখানে এখনও এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ইমরানের দল পিটিআইয়ের এমপির সংখ্যা।
৩৪২ সদস্যের পার্লামেন্টে পিটিআইয়ের সদস্য আছেন ১৫৫ জন। শাহবাজের দল মুসলিম লীগের সদস্য ৮৪ জন; আর প্রয়াত বেনজির ভুট্টোর দল পিপিপির সদস্য ৫৬ জন, যে দলের নেতৃত্ব এখন দিচ্ছেন বেনজিরের ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো।