রাজধানী ঢাকার রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ভয়াবহ বোমা হামলার পার হতে চললো ২১ বছর। ৮ বছর আগে হামলার ঘটনায় হত্যা মামলার রায়ে আটজনের মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। তবে একই ঘটনায় করা বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচারকাজ শেষ হয়নি এখনো।
বিস্ফোরক আইনের আলোচিত এ মামলাটি ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আবু আব্দুল্লাহ ভুইয়া গণমাধ্যমকে বলেন, রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় ৮৪ জনের মধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন ৫৪ জন। আগামী ২০ এপ্রিল মামলাটির যুক্তি উপস্থাপনের দিন ধার্য রয়েছে। এরপরই রায়ের দিন ধার্য হবে। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলার রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য হবে। রায়ে সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করছি আমরা।
তিনি আরও বলেন, গত ১০ এপ্রিল মামলাটির যুক্তি উপস্থাপনের দিন ধার্য ছিল। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক আবু হেনা মো. ইউসুফকে আবারও জেরা করার আবেদন করেছিলেন। আদালত তা নামঞ্জুর করায় উচ্চ আদালতে যেতে আদালতের কাছে সময় প্রার্থনা করে আসামিপক্ষ। পরে আদালত আবেদন মঞ্জুর করে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ২০ এপ্রিল দিন ধার্য করেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ পর্যায়ে। এ মামলার যুক্তি উপস্থাপনের দিন ধার্য রয়েছে। বিচারিক কার্যক্রম দ্রুত শেষ হবে বলে আশা করছি।
২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল (পহেলা বৈশাখ ১৪০৮ বঙ্গাব্দ) ভোরে রমনার বটমূলে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানস্থলে দুটি বোমা পুঁতে রাখা হয় এবং পরে রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে সেগুলোর বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ওইদিন বর্ষবরণের অনুষ্ঠান চলাকালে সকাল ৮টা ৫ মিনিটে একটি ও ১০টা ১৫ মিনিটের পর অন্য বোমাটি বিস্ফোরিত হয়। নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) নৃশংস ওই বোমা হামলায় প্রাণ হারান ১০ জন। আহত হন আরও অনেকেই। এ ঘটনায় হুজি নেতা মুফতি হান্নানসহ ১৪ জনকে আসামি করে ওইদিনই রমনা থানার পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে আলাদা দুটি মামলা করেন।
মামলার বিবরণে বলা হয়, পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান ‘ইসলামবিরোধী’ বিবেচনা করে ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালানো হয়। হামলায় ঘটনাস্থলেই নয়জনের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে মারা যান একজন।
২০০৮ সালের ২৯ নভেম্বর শীর্ষ হুজি নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে সিআইডির পরিদর্শক আবু হেনা মো. ইউসুফ আদালতে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে আলাদা দুটি সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এর মধ্যে ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রুহুল আমিন হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে মুফতি হান্নান, বিএনপি নেতা ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ আটজনের মৃত্যুদণ্ড এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারক।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন—মাওলানা তাজউদ্দিন (পলাতক), মাওলানা আকবর হোসাইন, মুফতি আব্দুল হাই (পলাতক), হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর (পলাতক), মাওলানা আবু বকর, মুফতি শফিকুর রহমান (পলাতক) ও আরিফ হাসান সুমন। দণ্ডপ্রাপ্ত এ আট আসামিকে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দেন আদালত। এছাড়াও তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।
এ মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা সাব্বির, হাফেজ ইয়াহিয়া, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মাওলানা আব্দুর রউফ ও মাওলানা শাহাদাৎ উল্লাহ জুয়েল। ৩০২/৩৪ ধারায় তাদের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন মামলার অন্যতম আসামি মুফতি হান্নানসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
এ মামলায় অভিযুক্তরা হলেন মুফতি আব্দুল হান্নান, মাওলানা আকবর হোসাইন, মুফতি আব্দুল হাই, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর, মুফতি শফিকুর রহমান, মাওলানা তাজউদ্দিন, আরিফ হাসান সুমন, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা সাব্বির, হাফেজ ইয়াহিয়া, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মাওলানা আব্দুর রউফ ও মাওলানা শাহাদাৎ উল্লাহ জুয়েল।
এর মধ্যে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল রাতে মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার দায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ফলে বিস্ফোরক আইনের এ মামলা থেকে অব্যাহতি পান হরকাতুল জিহাদের এ শীর্ষ নেতা।