বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের বিধিনিষেধ পেরিয়ে, পুরোনো জরা ও গ্লানি মুছে ফেলে বাঙালি আজ বরণ করে নিচ্ছে নতুন বছরকে। বাংলা নববর্ষ ১৪২৯ বঙ্গাব্দের প্রথম দিনটিকে বরণ করতে হালখাতা, বৈশাখী মেলার আয়োজনসহ বাঙালির উদ্যোগে নেই কোনো ধরনের কার্পণ্য। এতে রয়েছে বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরার প্রবল প্রয়াস। এই দিনটির ভোরবেলায় রাজধানী ঢাকার রমনা বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠান, বর্ষবরণ উৎসবের অবিচ্ছেদ্য অংশ। গত দুই বছর করোনার কারণে রমনা বটমূলের অনুষ্ঠান হয়নি। এবার হচ্ছে এবং নিরাপত্তার স্বার্থে তা চলবে দুপুর ২টা পর্যন্ত। আজ থেকে ২১ বছর পূর্বে এই দিনে রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় নিহত হন নয়জন। আহত হন বহু মানুষ। তাছাড়া বছর সাতেক আগে পহেলা বৈশাখে রাজধানীতে নারী লাঞ্ছনার ঘটনাও ঘটে। এসব শুভ লক্ষণ নয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে এবারও পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বাঙালির অসাম্প্রদায়িক উৎসব পহেলা বৈশাখের প্রতি একটি ক্ষুদ্র ধর্মান্ধ প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর রয়েছে গাত্রদাহ, এমনটা থাকাও স্বাভাবিক, কেননা তারা চিন্তা-চেতনায় ক্ষুদ্রকায় প্রাণীর চেয়েও নগণ্য। তবে আশার কথা হচ্ছে, রমনার নৃশংস ঘটনা বাঙালিকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। কিন্তু এ কথা সত্য যে, অপশক্তির অপতৎপরতা এখনও বন্ধ হয়নি। প্রতিক্রিয়াশীলরা গণতন্ত্র, প্রগতি, বাঙালি সংস্কৃতি-সবকিছুরই বিরুদ্ধে। কাজেই আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে জোরদার করে, প্রগতির পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে ধরে, বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চরিত্র আরও বিকশিত করেই এই অপতৎপরতা রুখতে হবে।
সবশেষে বলতে চাই, পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব। এটি বাঙালি জাতির একান্তই স্বকীয় এবং সর্ববৃহৎ সার্বজনীন সাংস্কৃতিক উৎসব। বাঙালির চিরায়ত অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক চেতনায় উজ্জীবীত হওয়ার দিন। বাংলা নববর্ষ ১৪২৯, সবার জীবনে মঙ্গল ও কল্যাণ বয়ে আনুক। শুভ নববর্ষ।