ধর্মীয় গোঁড়ামি কখনোই বাঙালির ওপর দীর্ঘমেয়াদি হয়নি: জয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

সজীব ওয়াজেদ জয়
ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা ও তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ধর্মীয় গোঁড়ামি কখনোই বাঙালির ওপর দীর্ঘমেয়াদে চেপে বসতে পারেনি। বাংলার মানুষ ধর্মপ্রাণ, কিন্তু ধর্ম ব্যবসায়ী নয়।

পহেলা বৈশাখে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ফেসবুক পোস্টে সজীব ওয়াজেদ এ কথা লিখেছেন।

universel cardiac hospital

সজীব ওয়াজেদ জয় লিখেছেন, ইতিহাস বলে, ধর্মীয় গোঁড়ামি কখনোই বাঙালির ওপর দীর্ঘমেয়াদে চেপে বসতে পারে নাই। আমাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকই ধর্মপ্রাণ মুসলমান, কিন্তু ধর্মান্ধ নন। বাংলার মানুষ ঐতিহ্যগতভাবে সরলপ্রাণ ও ধর্মপ্রাণ, কিন্তু ধর্ম প্রদর্শনকারী বা ধর্মব্যবসায়ী নয়।

১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সজীব ওয়াজেদ বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষরাই একসময় বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতি রক্ষার জন্য ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। যার ফলে, ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে ২৩৭টি মুসলিম আসনের মধ্যে ২২৩টিতে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ। বিপরীতে মাত্র ৯টি আসন পেয়ে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায় ধর্মব্যবসায়ীরা।

গত শারদীয় দুর্গোৎসবে দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির, মণ্ডপে হামলার ঘটনায় সাম্প্রদায়িক শক্তির আস্ফালন প্রত্যক্ষ করে বাংলাদেশ। সম্প্রতি মুন্সীগঞ্জ সদরের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডল ও নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পালের ধর্ম অবমাননার কথিত অভিযোগ উত্থাপনের পর দেশজুড়ে তোলপাড় হয়। ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আসার পর সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার এক শিক্ষক আত্মগোপনে চলে গেছেন।

এসব ঘটনায় বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িকতা আবারও প্রশ্নবিদ্ধ হলে বঙ্গবন্ধু দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ ফেসবুক স্ট্যাটাসে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষতার কথা তুলে ধরেন।

সজীব ওয়াজেদ বলেন, আপনারা জানেন- দীর্ঘ মুক্তিসংগ্রাম এবং ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে যে চারটি স্তম্ভের ওপর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো ধর্মনিরপেক্ষতা। সবাই সবার নিজের ধর্ম পালন করবে, অন্যদের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে, ধর্ম নিয়ে কেউ সহিংসতা করবে না- এটাই হলো ধর্মনিরপেক্ষতার মূল কথা। এর সঙ্গে নৃতাত্ত্বিকভাবে চলে আসা বাঙালি সংস্কৃতির কোনো বিভেদ নেই। সাংস্কৃতিকভাবে আমরা অনেক সমৃদ্ধ জাতি।

আবহমান বাংলার ইতিহাস মনে করিয়ে দিয়ে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ইতিহাস বলে, ধর্মীয় গোঁড়ামি কখনোই বাঙালির ওপর দীর্ঘমেয়াদে চেপে বসতে পারে নাই। প্রত্যেক বাঙালি শান্তিপূর্ণভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করুন এবং একইসঙ্গে হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য লালন করুন। যারা এটি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করতে চায়, তারা বাংলাদেশকে, বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে এবং সংস্কৃতিকে ধারণ করে না।

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে সজীব ওয়াজেদ বলেন, আসুন আমরা সবাই জাতি- ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করি। করোনামুক্ত দেশে আবারো প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনুক এবারের বৈশাখ। নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই সম্প্রীতির পথে হাঁটতে শুরু করুক সবাই। বাংলা ভাষা এবং হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ ঘটুক আমাদের নতুন প্রজন্মের হাত ধরে।

স্বাধীন দেশে নিজেদের সংস্কৃতি লালন করা প্রতিটি নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, পূর্বপুরুষদের অনিঃশেষ ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, এই দেশে চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ ঘটানো প্রয়োজন। আবহমান বাংলার প্রধানতম সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হলো অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমাজের সবাই মিলেমিশে থাকা। শান্তি ও সমৃদ্ধির আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে শুরু হোক নতুন বছর।

শেয়ার করুন