নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে সন্ত্রাসীদের গুলিতে বাবার কোলে থাকা ৪ বছর বয়সী শিশু জান্নাতুল ফেরদাউস তাসপিয়া হত্যার চার দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত মামলার প্রধান আসামি রিমনকে (২৬) গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহত শিশুর স্বজনরা।
পুলিশ বলছে, আসামিরা এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আত্মগোপনে রয়েছেন। তবে রিমনসহ আত্মগোপনে থাকা অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে সকল ধরনের চেষ্টা চলছে।
নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বেগমগঞ্জ সার্কেল) নাজমুল হাসান রাজিব বলেন, মামলার প্রধান আসামি ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ ও র্যাবসহ পিবিআইয়ের (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন) একাধিক দল কাজ করছে। যেহেতু আসামিরা এখন এলাকাছাড়া, তাই তাদের গ্রেপ্তারে খানিকটা সময় লাগছে।
এর আগে গত বুধবার নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাবার কোলে থাকা জান্নাতুল ফেরদাউস তাসপিয়াকে গুলি করে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী। এসময় নিহত শিশুর বাবা সৌদি প্রবাসী মাওলানা আবু জাহেরও (৩৭) গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার নিহত তাসপিয়ার খালু হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে এবং সন্ত্রাসী বাহিনী প্রধান রিমনকে প্রধান আসামি করে বেগমগঞ্জ মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়।
এর মধ্যে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে কোম্পানীগঞ্জ ও বেগমগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে এমাম হোসেন স্বপন (৩২), জসিমউদদীন বাবর (২৩) ও দাউদ হোসেন রবিন (১৮) নামের ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শিশু তাসপিয়া হত্যার বিচার ও খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে শুক্রবার বিকেলে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন এলাকাবাসী। এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে তাসপিয়ার মরদেহ নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের মামাতো ভাই আবদুল্লাহ আল মামুনের ভাষ্য, মাটি কাটা নিয়ে বিরোধের জেরে বুধবার বিকেল ৪টার দিকে রিমনের নেতৃত্বে তার বাহিনীর সদস্য রহিম, মহিন ও সুজনসহ ১০-১৫ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী দোকানে এসে তাকে গালিগালাজ করে। ওই সময় তার মামা জাহের শিশুকন্যা তাসপিয়াকে নিয়ে দোকানে আসেন চিপস আর চকলেট কিনে দেওয়ার জন্য। তখন জাহেরকে দোকানে দেখে তাকেও গালমন্দ করা শুরু করে রিমন। প্রথমে তারা আবু জাহের ও তার মেয়েকে লক্ষ্য করে এক রাউন্ড গুলি করে। ওই গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে তাসপিয়াকে ইট দিয়ে আঘাত করে।
মামুন বলেন, ‘এরপর মামা (আবু জাহের) দোকান থেকে বের হয়ে বাড়ির দিকে যেতে থাকলে রিমন ও তার বাহিনীর সদস্যরা আবার পেছন থেকে তাদের লক্ষ্য করে গুলি করে। এ সময় তাসপিয়ার কানে ও মাথায় এবং মামার চোখে গুলি লাগে।’
এরপর স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু ঢাকায় নেওয়ার পথে রাত সাড়ে ৮টার দিকে মারা যায় তাসপিয়া।