ছেলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি, বাবা আওয়ামী লীগের নেতা

যশোর প্রতিনিধি

বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের নবগঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ। তার পরিবারের সদস্যরা বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এমনকি রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণের বাবা ও এক ভাই বর্তমানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিও।

ছেলের এই রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে কোনো উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেননি শ্রাবণের বাবা। তিনি জানালেন, গত ১৩ বছর ধরে গ্রামের বাড়িতে যান না ছাত্রদলের নতুন সভাপতি শ্রাবণ।

universel cardiac hospital

শ্রাবণের গ্রামের বাড়ি যশোরের কেশবপুর উপজেলার চিংড়া গ্রামে। ২০০৩ সালে কেশবপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের আসাবিক ছাত্র শ্রাবণ কিছুদিনের মধ্যেই ছাত্রদল কর্মী হিসেবে হল ও বিভাগের সহপাঠীদের মধ্যে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন।

এর আগে ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বরে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী ছিলেন শ্রাবণ। সেই সময় আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে ছাত্রদল সভাপতি প্রার্থী হওয়া নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়েছিল। ওই সম্মেলনে ভোটে হেরে ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি।

শ্রাবণের বাবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কাজী রফিকুল ইসলাম। তিনি কেশবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান। সর্বশেষ নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। সে সময় সাময়িকভাবে দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হলেও পরবর্তীতে আবার আওয়ামী লীগে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।

ছাত্রদল সভাপতির বড় ভাই মুস্তাফিজুল ইসলাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ছিলেন। পঞ্চম ধাপে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় বর্তমানে দল থেকে বহিষ্কৃত তিনি।

শ্রাবণের আরেক ভাই মোজাহিদুল ইসলাম উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক। ছোট ভাই আযাহারুল ইসলাম উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক।

রোববার রওনাকুল ইসলাম ছাত্রদলের সভাপতি হওয়ার খবর প্রকাশ হলে তা কেশবপুরের রাজনৈতিক মহলে প্রধান আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। এই ঘটনাকে এক পরিবারের মধ্যে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সহাবস্থান হিসেবে দেখছেন অনেকে। তবে আওয়ামীপন্থী পরিবারের সন্তান হয়েও শ্রাবণের ছাত্রদল সভাপতি হওয়ার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানাভাবে আলোচিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাস্টার রুহুল আমিন বলেন, রাজনীতি করার অধিকার সবার আছে। পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও শ্রাবণ ছাত্রকাল থেকেই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এতে দোষের কিছু নেই।

শ্রাবণের পরিবারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি কেউ। তবে ২০১৯ সালে ছাত্রদলের সভাপতি হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকালে তার বাবা রফিকুল ইসলাম সাংবাদিক সম্মেলনে ছেলেকে ‘তাজ্য ঘোষণা’ করে জানিযেছিলেন, ১৩ বছর ধরে পরিবারের সঙ্গে শ্রাবণের কোনো সম্পর্ক নেই।

শেয়ার করুন