বিদ্যুৎ বিভ্রাট, গ্যাস ও পানির তীব্র সংকট, খাদ্য সংকট, প্রয়োজনীয় পণ্যের আকাশচুম্বী দামসহ নানা সমস্যার বেড়াজালে আটকা পড়েছে শ্রীলঙ্কা। সম্প্রতি সাধারণ মানুষের তোপের মুখে একসঙ্গে পদত্যাগ করেন ২৬ মন্ত্রী। শুধু পদত্যাগ করেননি দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের বড় ভাই ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। পরে মন্ত্রী পরিষদ ভেঙে জাতীয় ঐক্য সরকারের ডাক দেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া। এবার বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসেকে প্রধানমন্ত্রী রেখেই নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করলেন তিনি। তবে নতুন মন্ত্রিসভায় পরিবারের আর কোনো সদস্যকে রাখেননি গোতাবায়া।
সোমবার (১৮ এপ্রিল) দেশটির প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, সচিবালয়ে গোতাবায়া রাজাপাকসের সামনে ১৭ জন নতুন মন্ত্রী শপথ নিয়েছেন।
তবে প্রেসিডেন্টের এমন সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ বিক্ষোভকারীরা। তাদের একটাই দাবি, গোতাবায়ার পদত্যাগ। এর আগে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার (১১ এপ্রিল) রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। এসময় তিনি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী তরুণদের বিষয়টি যৌক্তিকভাবে ভাবার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে বলেন, সরকারবিরোধী বিক্ষোভে জাতীয় পতাকা বহনকারী বিক্ষোভকারীদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে কে তাদের দেশের যে কোনো জায়গায় জাতীয় পতাকা রাখতে সক্ষম হন।
দেশটিতে অর্থনীতি ধসে পড়ার জন্য সরকারকে দায়ী করে বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) রাতে কলম্বোর মিরিহানায় প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের ব্যক্তিগত বাসভবনের বাইরে বিক্ষোভ শুরু করে কয়েকশ মানুষ। এতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় বিক্ষোভকারীদের। শেষ পর্যন্ত টিয়ার শেল আর জলকামান ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে আহত হন অন্তত ৫০ জন। আটক করা হয় আরও ৫০ জনের মতো আন্দোলনকারীকে।
এখনো অব্যাহত রয়েছে আন্দোলন। এর মাঝেই মন্ত্রী পরিষদ সদস্যদের নিয়োগ দিলেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া। আবারও ক্ষমতার শীর্ষ আসনে থাকলেন দুই ভাই। এতেই বোঝা যাচ্ছে, আপাতত ক্ষমতা ছাড়ছেন না তারা, বরং ক্ষমতায় থেকে সংকট মোকাবিলায় সবাইকে একত্রে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছেন মাহিন্দা রাজাপাকসে ও গোতাবায়া রাজাপাকসে।
২৬ বছর ধরে সামরিক অভিযান পরিচালনার পর শ্রীলঙ্কার সামরিক বাহিনী ২০০৯ সালের তামিল টাইগারদের পরাজিত করার মাধ্যমে গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাতে সক্ষম হয়। আর সেই গৃহযুদ্ধে বিজয় আসে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের শাসনকালে। পরবর্তীতে আবারও নির্বাচনে জয়ী হয় এই পরিবার। ফলে দীর্ঘমেয়াদে শাসনভার পরিচালনার কারণে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। দেশের এ হেন পরিস্থিতির জন্য পরিবারকেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থাকে দায়ী করে তাদের পদত্যাগ চাইছেন আন্দোলনকারীরা।
সূত্র: বিবিসি, আল-জাজিরা, রয়টার্স