রাজধানী ঢাকার নিউমার্কেট এলাকার চলমান সংঘর্ষে ‘পুলিশ ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিয়েছে’, ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপির) রমনা অঞ্চলের উপ-কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান।
পুলিশ কারও পক্ষে-বিপক্ষে নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যক্তির সম্পদও রাষ্ট্রেরই সম্পদ, রাষ্ট্রের সম্পদ রক্ষায় পুলিশ কাজ করেছে। কারও পক্ষ নেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের সবশেষ পরিস্থিতি জানতে এবং শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়টি সামনে আনলে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে মঙ্গলবার সকাল থেকে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলাকালে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীরা বারবারই অভিযোগ করছিলেন, পুলিশ শুরু থেকেই ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিয়েছে। তাদের অভিযোগ, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মধ্যস্থতার ভূমিকা না নিয়ে পুলিশ একতরফাভাবে শিক্ষার্থীদের ওপর টিয়ারশেল নিক্ষেপ করছে।
এ বিষয়ে ডিসি সাজ্জাদুর বলেন, কারও পক্ষ নেওয়ার কোনো কারণ নেই। ঢাকা কলেজ বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় কোনো কারণে যদি আমাদের বিপক্ষেও যেতে হয়, বিরূপ আচরণও করতে হয়, তবে সেটা কোন পরিস্থিতিতে সবাই তা অনুমান করতে পারেন। আমরা কারও পক্ষে-বিপক্ষে নই।
তিনি বলেন, গতকাল সোমবার রাতের সংঘর্ষের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সকাল থেকে আবার সংঘর্ষ শুরু হয়। এ পর্যন্ত কতজন আহত হয়েছে, এর সুস্পষ্ট কোনো তথ্য নেই।
পুলিশ মধ্যস্থতা না করে ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিয়েছে, শিক্ষার্থীদের এমন অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের এ অভিযোগের কোনো ডকুমেন্টস আছে? কারও পক্ষ নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ব্যক্তির সম্পদ মানেই রাষ্ট্রের সম্পদ। রাষ্ট্রের সম্পদ রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
সোমবার (১৮ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১২টার দিকে নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, যা চলে রাত আড়াইটা পর্যন্ত। মধ্যরাতে দুপক্ষকে ওই এলাকা থেকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
এরপর মঙ্গলবার সকালে দ্বিতীয় দফায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের অবরোধের পর নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। সকাল সাড়ে ১০টার পর নীলক্ষেত মোড়-সায়েন্সল্যাব এলাকায় থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে। সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ঢাকা কলেজ ও নিউমার্কেটসহ আশপাশ এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এদিকে চলমান সংঘর্ষের ঘটনায় পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে মঙ্গলবার বিকেল চাঁদপুর সার্কিট হাউজে এক অনুষ্ঠান থেকে একদিন আগেই ঢাকা কলেজে ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
এর আগে দুপুরে ঢাকা কলেজের আবাসিক হল আগামী ৫ মে পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে বিকেলের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এর কিছুক্ষণ পরই শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের এ ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেন। আবাসিক হল বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। একইসঙ্গে অধ্যক্ষের অপসারণসহ ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনার বিচার দাবিতে স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।