সমীর তিনজনকে উদ্ধার করেছেন, নিজের ছেলেকে খুঁজে পাচ্ছেন না

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

স্ত্রী, পাঁচ বছরের মেয়ে ও ১০ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে স্পিডবোটে করে সমীর হোসেন চট্টগ্রাম থেকে যাচ্ছিলেন সন্দ্বীপে নিজ বাড়িতে। হঠাৎ ঝড়ের কবলে ২২ জন যাত্রীসহ স্পিডবোটটি উল্টে যায়। অনেকে সাঁতরে তীরে ওঠেন। স্ত্রী, কন্যা ও আরও তিনজন যাত্রীকে প্রাণে বাঁচান সমীর। তবে খোঁজ পাচ্ছেন না নিজের ছেলের।

ঘটনার ২৮ ঘণ্টা পরও ছেলের জন্য এদিক-ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছেন এই বাবা। তার আশা, জীবিত হোক বা মৃত হোক ১০ বছর বয়সী ছেলে মনির হোসেন সৈকতকে পাবেনই।

universel cardiac hospital

সন্দ্বীপ উপকূলে গতকাল বুধবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে উল্টে যায় স্পিডবোটটি। এতে এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। সৈকতসহ এখনো নিখোঁজ তিনজন। দুর্ঘটনার সময় সমীরের কোলে ছিল তাঁর পাঁচ বছর বয়সী মেয়েশিশু। ছেলে সৈকত ছিল মায়ের কাছে।

সমীর জানান, যখন স্পিডবোট ডুবে যাচ্ছিল, তখন মায়ের হাত থেকে ছুটে সৈকতও ডুবে যায়। মেয়েকে নিয়ে সাঁতরে তীরে ওঠেন সমীর। এক যাত্রীর কাছে মেয়েকে রেখে ছেলে সৈকতকে উদ্ধারে পানিতে আবার নেমে পড়েন। কিন্তু সেখানে এক নারীকে ডুবে যেতে দেখে তাঁকে উদ্ধার করেন। উদ্ধার করেন আরও দুজনকে। অথচ নিজের ছেলেকে খুঁজে পাননি সমীর। এখনো খুঁজে চলছেন।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে যখন সমীরের সঙ্গে কথা হয়, তখনো নৌকা নিয়ে ছেলেকে উদ্ধারের জন্য সন্দ্বীপ চ্যানেলে খুঁজছিলেন। তিনি বলেন, মনকে তিনি বোঝাতে পারছেন না যে তার ছেলে জীবিত নেই। গতকাল সকাল থেকেই দুচোখের পাতা এক করতে পারেননি। আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই একটি নৌকা নিয়ে উরির চর উপকূলে ঘুরছেন। এরপর নৌবাহিনীর ডুবুরি দল আসার খবরে তারা গুপ্তছড়া ঘাটে আসেন।

সমীরের একমাত্র ছেলে এখনো নিখোঁজ থাকলেও তার হাত ধরে তিন যাত্রীর উদ্ধারের গল্প এখন সন্দ্বীপের সবার মুখে মুখে। ওই স্পিডবোটে থাকা যাত্রী নজরুল ইসলাম বলেন, নিজের মেয়েকে তীরে রেখে উনি (সমীর) অন্যদের বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। কয়েকজনকে উদ্ধার করেছেন। অন্য কেউ হলে তা করতেন না।

নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারে স্থানীয় উদ্ধারকারী, কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি কাজ শুরু করেছে নৌবাহিনীর ডুবরি দল। সন্দ্বীপের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সম্রাট খীসা বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত এ তিন শিশুকে উদ্ধার করা যাবে না, ততক্ষণ উদ্ধার অভিযান চলবে।

শেয়ার করুন