পৃথিবীকে রক্ষা করা ও বাসযোগ্য রাখতে আরো চিন্তাচেতনার জন্য বছরের একটি দিন বিশেষভাবে নির্দিষ্ট। দিনটি ২২ এপ্রিল, সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে এর পরিচিতি ‘ওয়ার্ল্ড আর্থ ডে’, বা ‘বিশ্ব ধরিত্রী দিবস’ হিসেবে। পৃথিবীরই আরেক নাম ধরিত্রী। পরিবেশ ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার মাধ্যমে ধরিত্রীকে টিকিয়ে রাখার আকুল আবেদন নিয়ে দিবসটি প্রতিবছর পৃথিবীর বাসিন্দাদের সামনে হাজির হয়। পৃথিবীকে নিরাপদ রাখতে জলবায়ু সংকট ও পরিবেশ দূষণ রোধে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে দিবসটি।
প্রতি বছর বিশ্ব ধরিত্রী দিবস উদযাপন করা হয় এক-একটি বিশেষ ভাবনা নিয়ে। তবে তাতে বিভিন্ন রূপে থাকে সবুজায়নের চেষ্টা। কেননা, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখন প্রাকৃতিক দুর্যোগে জর্জরিত। পৃথিবী ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলেছে। ক্রমবর্ধমান মানবসভ্যতার উন্নয়নের নামে দশকের পর দশক ধরে প্রকৃতিকে অবহেলা করে মানুষ আজ এক ভয়াবহ বিপদে বিপর্যস্ত করে তোলেছে ধরিত্রীকে।
মাটির ক্ষয় নষ্ট করছে পরিবেশের ভারসাম্য। ব্যাপক হারে গাছ কাটা মাটির ওপরে চাপ তৈরি করছে। মাটির স্বাস্থ্য আরো খারাপ হয়েছে। তাপমাত্রা বাড়ার ফলে বিভিন্ন মৌসুমের ফসলের পরিমাণ কমছে। এতেও পৃথিবীর রাষ্ট্রপ্রধানদের টনক নড়ছে না। ‘সুপার পাওয়ারের’ তকমা পেতে উন্নত দেশগুলো প্রকৃতির স্বাভাবিকতা নষ্ট করছে। বাস্তুতন্ত্র পরিবর্তন করে পৃথিবীকে সঙ্কটের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
সৃষ্টি করছে বিশ্ব উষ্ণায়ন। মনুষ্য-কারণে সৃষ্ট গ্রিন হাউজ গ্যাসের প্রভাবে দিন দিন ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে ওজোন স্তর। এখনই যথাযথ ও কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে মানবজাতির জন্য অপেক্ষা করছে ভয়ঙ্কর এক পরিণতি। এমন পরিস্থিতিতে এবার বিশ্ব ধরিত্রী দিবসের স্লোগান, ‘ধরিত্রী রক্ষায় বিনিয়োগ করো।’
তাই আমাদের, মানে সব মানুষের উচিত হবে প্রকৃতির প্রত্যেকটি উপাদানকে সম্মান করা। কারণ, আমাদেরকে জীবনধারণের জন্য পরিবেশ ও প্রকৃতির অন্যান্য উপাদানের ওপর নির্ভর করতে হয়। আমাদের উচিত, আরো সচেতন হয়ে প্রকৃতিকে রক্ষা করা। মনুষ্য সমাজ শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসের জন্য পৃথিবীতে আসেনি। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি বিপর্যয়মুক্ত পৃথিবী রেখে যাওয়া আমাদের দায়িত্ব। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার মতো অঙ্গীকার হোক বিশ্বজনীন। ‘এ বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি- নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার’।