ভারতের কর্ণাটক রাজ্যে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পড়ে শ্রেণিক্ষে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল ৮ ছাত্রী। তাদের মধ্য থেকে দুজনকে দ্বিতীয় বর্ষের প্রি-ইউনিভার্সিটি কলেজ (পিইউসি) পরীক্ষা দিতে দেওয়া হয়নি।
শুক্রবার (২২ এপ্রিল) এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস।
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রদিবেদনে বলা হয়, আলিয়া আসাদি এবং রেশাম নামে দুই ছাত্রী হিজাব পড়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়ায় তাদেরকে কর্ণাটকের উদুপি জেলার একটি পরীক্ষা কেন্দ্র ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
উদুপি সরকারি গার্লস পিইউ কলেজের অধ্যক্ষ রুদ্রে গৌড়া বলেন, ‘আলিয়া এবং রেশম শুক্রবার সকালে তাদের হল টিকিট সংগ্রহ করেছে। কিন্তু তারা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল কিনা তা জানা নেই। শুক্রবার থেকে বাণিজ্য শাখার দ্বিতীয় বর্ষের পিইউসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্রীদের মধ্যে কয়েকজন বিজ্ঞান বিভাগের ছিল। বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষা শনিবার থেকে শুরু হয়েছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে অন্তত আটজন মুসলিম শিক্ষার্থীকে হিজাব পরে ক্লাসে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। ১ জানুয়ারি কলেজ উন্নয়ন কাউন্সিল (সিডিসি) ক্যাম্পাসের ভিতরে হিজাব নিষিদ্ধ করার একটি আদেশ পাস করায় ছাত্রীরা কলেজ ভবনের বাইরে গিয়ে ক্যাম্পাসের মধ্যেই প্রতিবাদ করে।
কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ক্লাসরুমের ভিতরে কখনই হিজাব অনুমোদিত নয়। ফেব্রুয়ারি নাগাদ রাজ্য জুড়ে এ নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়লে জাফরান শাল পরা কিছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে পাল্টা প্রতিবাদ হয়। ৩ ফেব্রুয়ারি উদুপির কুন্দাপুরায় অন্তত ২৫ জন হিজাব-পরিহিত শিক্ষার্থীকে বাইরে রেখে সরকারি পিইউ কলেজের অধ্যক্ষের গেট বন্ধ করার একটি ভিডিও বিষয়টিকে ব্যাপক আন্দোলনে পরিণত করেছে।
বিজেপির ওবিসি সেলের জাতীয় কোষাধ্যক্ষ যশপাল সুবর্ণ বলেন, ‘আগামী দিনগুলিতে শুধু কলেজগুলিতে নয় বরং সমস্ত পাবলিক স্পেসেও হিজাব নিষিদ্ধ করার সম্ভাবনা রয়েছে।’
উদুপি সরকারী গার্লস পিইউ কলেজের কলেজ উন্নয়ন কমিটির (সিডিসি) ভাইস-চেয়ারম্যান সুবর্ণা উচ্চ আদালত থেকে এই বিষয়ে রায় ঘোষণা করার অনেক আগেই কলেজে হিজাব পড়ার নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছিলেন।
সুবর্ণার বিরুদ্ধে হিজাবের মোকাবিলায় হিন্দু শিক্ষার্থীদের জাফরান শাল এবং পাগড়ি পরার জন্য সংগঠিত করার অভিযোগ আনা হয়েছে। যার ফলে ৮ ফেব্রুয়ারি উদুপিতে মহাত্মা গান্ধী মেমোরিয়াল (এমজিএম) কলেজের সামনে ছাত্রদের মধ্যে বাজে রকমের সংঘর্ষ হয়।
১৫ মার্চ, প্রধান বিচারপতি ঋতু রাজ অবস্থি, বিচারপতি কৃষ্ণ এস দীক্ষিত এবং বিচারপতি জেএম খাজির সমন্বয়ে গঠিত তিন বিচারপতির বেঞ্চ ১২৯ পৃষ্ঠার রায় দিয়েছেন। রায়ে বলা হয় ধর্মীয় অনুশীলনে হিজাব প্রয়োজনীয় নয়।
রাজ্য সরকার এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডাররা হিজাব পড়ার ব্যাপারে বলেন, হিজাব একটি পোষাক মাত্র। হিজাব পড়ার কথিত ধর্মীয় রীতি না মানলে তাদের পাপ হবে বা তাদের ধর্ম রক্ষা হবে না এমন কোনো বিষয় নেই।
কর্নাটকের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষামন্ত্রী বিসি নাগেশ টেলিভিশন ভাষণে বলেন, জানুয়ারি থেকে এই লোকদের বোঝানোর জন্য যথেষ্ট প্রচেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু তারা বোঝার মুডে নেই। মনে হচ্ছে অন্যান্য সংস্থাগুলি আমাদের চেয়ে তাদের বেশি বোঝাচ্ছে। আমরা শুধু সেই ছয়টি মেয়েকে দেখছি না বরং ১ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীকে দেখছি যারা এই (মুসলিম) সম্প্রদায়ের এবং পরীক্ষা দিচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় ৮২ হাজার মেয়ে রয়েছে। আমরা শুধু পরীক্ষা না দেওয়া ৬ জনের দিকে তাকাচ্ছি না বরং ৮১ হাজার শিক্ষার্থীর দিকেও নজর দিচ্ছি।