সরাইলে পুলিশ ‘হেফাজতে’ ব্যবসায়ীর মৃত্যুর অভিযোগ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় পুলিশ ‘হেফাজতে’ নজির আহমেদ সাফু (৩৫) নামে এক ওষুধ ব্যবসায়ীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। তবে পুলিশের ‘হেফাজতে’ তিনি মারা যাননি বলে দাবি করেছেন সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)।

নজিরের স্বজনদের অভিযোগ, থানায় যাওয়ার সময় পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন তিনি। তার জটিল কোনো শারীরিক সমস্যা ছিল না। পুলিশি হেফাজতে এমন কী হলো, যার কারণে নজিরের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতেই স্থানীয় থানায় নিহতের ভাই ১৩ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। মামলার দুই নম্বর আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মৃত নজির উপজেলা সদরের নিজসরাইল গ্রামের হাফেজ উবায়েদ উল্লাহর ছেলে। তিনি ঢাকায় ওষুধের পাইকারি ব্যবসা করতেন। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বসতবাড়ির জায়গা নিয়ে কয়েক বছর ধরে নজিরের সঙ্গে প্রতিবেশী হেলাল মিয়ার ছেলে জুম্মান মিয়ার বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে মামলাও হয়েছে।

গ্রামে দফায় দফায় সালিসও হয়েছে। জুম্মানের অসহযোগিতার কারণে ওই বিরোধ নিষ্পত্তি হয়নি। সম্প্রতি জুম্মান ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মোশায়েদ উল্লাহসহ আশপাশের গ্রামের বেশ কয়েক প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিরোধকে আরও ঘোলাটে করে তোলেন।

নজিরের স্বজনদের বরাতে পুলিশ বলছে, পূর্ববিরোধের জেরে জুম্মান গত বৃহস্পতিবার দিনভর নজির ও তার পরিবারের সদস্যদের গালমন্দ করে নানাভাবে নাজেহাল করার চেষ্টা চালান। রাত সাড়ে নয়টার দিকে জুম্মান নজিরের বসতবাড়ির প্রধান ফটক অতিক্রম করে শয়নকক্ষে ঢুকে পড়েন।

এ সময় নজিরের লোকেরা তাকে কক্ষে আটকে মারধর করে গুরুতর আহত করেন। রাত ১০টার দিকে সরাইল থানার এসআই সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ওই বাড়িতে গিয়ে জুম্মানকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। সঙ্গে নিয়ে আসা হয় নজিরকেও।

এ প্রসঙ্গে সরাইল থানার ওসি আসলাম হোসেন বলেন, মারধরের শিকার জুম্মান খুব অসুস্থ ছিলেন। চিকিৎসা দেওয়ার জন্য একই সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে জুম্মানের সঙ্গে নজিরকেও আমরা থানা থেকে হাসপাতালে (দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার) পাঠিয়েছিলাম। কারণ, অসুস্থ ব্যক্তির সঙ্গে একজন পাবলিককেও যেতে হয়।

ওসির দাবি, কিছু দূর যাওয়ার পর নজির বুকে ব্যথা অনুভব করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নজির পুলিশি হেফাজতে মারা যাননি। তিনি থানায় এসেছিলেন বাদী হিসেবে।

নজিরের বড় ভাই জাসদ একাংশের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হুসাইন আহমেদ তফসিরের অভিযোগ, নজিরকে সুস্থ অবস্থায় থানায় নেওয়া হয়। ফিরিয়ে দেওয়া হলো লাশ করে। এখানে পুলিশের কাছে থাকার সময়ে অবশ্যই একটা কিছু হয়েছে। আমরা সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।

ঘটনার রাতেই গ্রামের ইউপি সদস্য মোশায়েদ উল্লাহকে প্রধান আসামি করে ১৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন নজিরের আরেক ভাই ও কলেজ শিক্ষক জাফর আহমেদ। তার দাবি, নজিরের বুকের নিচে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। আমার সুস্থ ভাই এমনিতেই মারা যায়নি।

শেয়ার করুন