ভোজ্যতেলে আবার অশনি সংকেত!

মত ও পথ ডেস্ক

ভোজ্যতেল

সরকারের নানামুখী প্রচেষ্টায় সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম কিছুটা কমলেও ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার খবরে আবার অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে শুরু করেছে। একদিনের ব্যবধানে খুচরা পর্যায়ে রোববার কেজিতে খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম ২০ টাকা বেড়েছে। সামনে দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

তারা বলছেন, ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েলের কাঁচামাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় সারাবিশ্বে এর প্রভাব পড়বে। কারণ ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম পাম অয়েল উৎপাদনকারী দেশ। এতে পাম অয়েলের পাশাপাশি অন্যান্য ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাবে। ভোজ্যতেলের দাম বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের দামও বাড়বে।

এদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েলের কাঁচামাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার পাশাপাশি ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে বাড়তে পারে মূল্যস্ফীতি। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বাড়ানো উচিত। এক্ষেত্রে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ভোজ্যতেল বিক্রি কার্যক্রম বাড়ানো যেতে পারে।

শুক্রবার (২২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় কেবিনেট মিটিংয়ে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো বলেন, বাসাবাড়িতে রান্নার তেলের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে তেলের কাঁচামাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য এটি কার্যকর হবে।

ইন্দোনেশিয়ার এই নিষেধাজ্ঞার খবর শনিবার দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এর একদিন পরই
গতকাল রোববার দেশের বাজারে সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম বেড়ে গেছে। এক লাখে খুচরা পর্যায়ে খোলা সয়াবিন তেলের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। পাম অয়েলের দাম বেড়েছে ২৫ টাকা।

গত শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খুচরা পর্যায়ে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয় ১৬০ টাকা কেজি। এখন তা বেড়ে ১৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পাম অয়েলের দাম বেড়ে ১৭৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। খুচরা দাম বাড়ার পাশাপাশি পাইকারিতে সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম বেড়েছে।

এ বিষয়ে মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী মো. কেরামত আলী বলেন, ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি নিষেজ্ঞার খবরে পাইকারিতে সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম অনেক বেড়ে গেছে। বাড়তি দামে কেনার কারণে আমরাও বাড়তি দামে বিক্রি করছি। এখন খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ১৬০ টাকা। পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকা, যা আগে ছিল ১৫০ টাকা।

ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েলের কাঁচামাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় বাংলাদেশে কী ধরনের প্রভাব পড়বে- জানতে চাইলে বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ গোলাম মাওলা সাংবাদিকদের বলেন, ইন্দোনেশিয়ার এ নিষেজ্ঞার কারণে সব ধরনের ভোজ্যতেলের দাম বাড়বে। এরই মধ্যে দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে, সামনে আরও বাড়বে।

তিনি বলেন, সারাবিশ্বে পাম অয়েলের বড় জোগানদার ইন্দোনেশিয়া। এখন ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েলের কাঁচামাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় শুধু বাংলাদেশ না সারাবিশ্বে এর প্রভাব পড়বে। ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন জিনিসপত্রের দামও বাড়বে।

মৌলভীবাজারের আব্দুল রশিদ অ্যান্ড সন্স’র স্বত্বাধিকারী হাজি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ইন্দোনেশিয়ার এই নিষেধাজ্ঞার কারণে সব ধরনের ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাবে। ভোজ্যতেলের বাজারে আবার আগের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। সরকারের উচিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এখনই ভর্তুকির ব্যবস্থা করা।

সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞার ফলে শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানসহ সারাবিশ্বে এর প্রভাব পড়বে। দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। বিষয়টি নিয়ে ঈদের পর আমরা সরকারের সঙ্গে বসবো। আপাতত ঈদের আগে আমরা তেলের দাম বাড়াচ্ছি না।

সার্বিক বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ভোজ্যতেলের দাম আগেই বেড়েছিল। সরকার পদক্ষেপ নিয়ে দাম কিছুটা কমিয়েছে। তবে সেটা কতটা কার্যকর হয়েছে তা দেখার বিষয়। এখন ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েলের কাঁচামাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় সারাবিশ্বেই এর প্রভাব পড়বে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারের পরিস্থিতি ঠেকানো মুশকিল। কাজেই যেটা করতে হবে তা হলো- যারা দরিদ্র মানুষ তাদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সহায়তা বাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, দাম নিয়ন্ত্রণ করা সহজ নয়। এটা করতে গেলে দামও নিয়ন্ত্রণ হয় না, নানা রকমের অভিযোগ আসতে থাকে। বাজারে একটা খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। আবার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের মধ্যে দুর্নীতিও দেখা যায়। কাজেই সরকার টিসিবির মাধ্যমে বাজারে সরবরাহ বাড়ালে কিছুটা সুফল মিলতে পারে।

এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বাধার পর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার অজুহাতে দেশের বাজারে অস্বাভাবিক হারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। খুচরা পর্যায়ে খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৯০ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়।

পরিস্থিতি সামাল দিতে গত মার্চে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন তেল এবং পাম অয়েল আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে সরকার। ফলে সয়াবিন তেল ও পাম তেলের দাম কিছুটা কমে আসে। কিন্তু ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েলের কাঁচামাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে এমন সংবাদের পর আবার দাম বাড়ার পালে হাওয়া লেগেছে।

শেয়ার করুন