সিম ক্লোনিং ঠেকাতে আমরা কতটা প্রস্তুত?

আবু সালেহ মোহাম্মদ সায়েম

মোবাইল সিম কার্ডের অবিকল প্রতিরূপ/নকল তৈরিই হলো সিম ক্লোনিং। অন্যের মোবাইল নম্বরের মতো নম্বর বানিয়ে পরিচিত জনদের ফোন করা বা দায়িত্বশীল কোনো ব্যক্তির নম্বর কপি করে ফোন করে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা আদায়ের ঘটনা এখন দেশে আর নতুন নয়। শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও, এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। প্রতারণা, টার্গেট করে কোনো ব্যক্তির মোবাইল সিমের তথ্য সংগ্রহ বা চুরি, ছিনতাই করে মোবাইল সিম নিয়ে ক্লোন করে প্রতারণা, হুমকি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর ঘটনাও ঘটছে সিম ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে।

এছাড়া ক্লোন করা সিম দিয়ে (মোবাইল নম্বর) এসএমএস বা কল-লগ অথেনটিকেশন-নির্ভর যে কারো ফেসবুক আইডি, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি হ্যাক করা সম্ভব। মোবাইল ব্যাংকিং থেকে শুরু করে সব ধরনের অর্থ লেনদেনের অ্যাকাউন্ট দখলে নিয়ে, লেনদেনের সকল তথ্যসহ টাকা-পয়সা কবজা করে নিচ্ছে। সিম ক্লোন হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পরিচয় খুঁজে বের করা কষ্টসাধ্য বিষয়। ক্লোন করা হলে সিমের হুবহু নকল সিম তৈরি হয়ে যায়। ফলে কে আসল মালিক কে নকল তা শনাক্ত করা মুশকিল হয়ে যায়।

universel cardiac hospital

আর এই সুযোগ নিয়ে অপরাধীরা হুমকি-ধমকি দেওয়া, চাঁদাবাজি করা, সন্ত্রাসমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া, জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়া, আত্মীয়, বন্ধু-স্বজনদের কাছে টাকা ধার চাওয়া, বিখ্যাত বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির পরিচয় দিয়ে বড় কোনো কাজ করিয়ে নেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে পারে। যারা সিম নাম্বার দিয়ে ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটঅ্যাপ, ইমেইল, ব্যাকিং সাইট লগ-ইন করেছেন, তারা সিম ক্লোনিংয়ের শিকার হলে, মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েন। এতে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, চারিত্রিক, মানসিক হুমকির সম্মুখীন হতে পারেন।

সিম ক্লোনিংয়ের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সাইবার ক্রাইমের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা ও শাস্তি বাস্তবায়ন করা দরকার। এক্ষেত্রে প্রশাসনের মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। পাশাপাশি পেইড/ফ্রি ভার্শন যেসব সফটওয়্যার ব্যবহার করে ক্লোনিংয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়, সেসব সফটওয়্যার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে, ফিল্টারিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে কেউ ডাউনলোড করতে না পারে। সরকারি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে, অপরাধ দমনে কঠোর নজরদারি করতে হবে।

সর্বোপরি, প্রযুক্তিতে দক্ষ জনবল তৈরিতে সরকারি/বেসরকারি পর্যায়ে আরো অনেক বেশি মনোযোগ দিতে হবে, যাতে প্রযুক্তিযুদ্ধে অপরাধীর কাছে, সাধারণ জনগণ জিম্মি না হয়ে যায়।

শেয়ার করুন