রডের বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে কমিটি করছে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বাজারেও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে রডের দাম। গত মার্চ মাসের শুরুর দিকে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রতি টন রডের দাম ওঠে ৮৮ হাজার টাকা। এ নির্মাণসামগ্রীর লাগামহীন দামের প্রভাব পড়েছে দেশের আবাসন খাতে। সরকারি-বেসরকারি বা ব্যক্তি পর্যায়ের নানা নির্মাণকাজে দেখা দিয়েছে ধীরগতি। এ পরিস্থিতিতে রডের বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে কমিটি গঠনের চিন্তা করছে সরকার।

মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) নির্মাণসামগ্রীতে ব্যবহৃত রড (আয়রন), স্টিলের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের আয়োজনে মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। তবে নতুন কমিটির নেতৃত্বে কারা থাকছেন- এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।

ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আবদুল হান্নান।

বৈঠক শেষে সফিকুজ্জামান বলেন, অভিন্ন মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি ঠিক করতে একটি কমিটি গঠন করা হবে। সে কমিটি আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি অভিন্ন মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি সম্পর্কে সুপারিশ করবে। আগামী ৩০ মে’র মধ্যে গঠিত কমিটির কাছ থেকে প্রতিবেদন আশা করবো আমরা।

তিনি বলেন, ভোক্তাদের সমস্যা ও সমাধান নিয়ে কাজ করছে ক্যাব। ক্যাবের কল সেন্টারের মাধ্যমে আসা অভিযোগ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ কনস্ট্রাকশন কিংবা ডেভেলপার তাদের কাজ বন্ধ রেখেছে। যার মূল এবং প্রধান কারণ রড, স্টিল, সিমেন্টসহ নির্মাণসামগ্রীর অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধি।

ক্যাব নতুন করে নির্মাণসামগ্রীর উপকরণ নিয়ে পর্যালোচনা শুরু করছে বলেও জানান ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক।

মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের পরিচালক মোহাম্মদ শাহরিয়ার, বিএসএম সভাপতি মনোয়ার হোসেন, ট্রেড প্রতিনিধি মাহমুদ, বাংলাদেশ কনস্ট্রাকশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট বিমল রায়সহ রড কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা।

ভোক্তা অধিকারের পরিচালক শাহরিয়ার বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে তিনি নির্মাণসামগ্রীর দোকানে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। যারা বাজারের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যবসা করছে এমন কয়েকটি দোকানে জরিমানাও করা হয়েছে।

রডের এ দাম বাড়ার কারণসহ সভার শুরুতে বিএসএম সভাপতি মনোয়ার হোসেন একটি বর্ণনা চিত্র তুলে ধরেন।

যেখানে ২০১৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, দেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি ছাড়াও গ্যাস সরবরাহের কারণে তাদের যে ক্ষতি হয়েছে তা তুলে ধরা হয়।

এসময় ট্যাক্স কমানো, বিদ্যুৎ বিল কমানো এবং গ্যাসের দাম কমিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ভর্তুকি দেওয়ার আহ্বান জানান ট্রেড কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা।

এছাড়াও গ্যাস বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের ন্যায় নির্মাণসামগ্রীর দাম নির্ধারণ করার বিষয়েও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাবনা রাখা হবে বলে জানায় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর।

গত বছরের (২০২১ সাল) নভেম্বরে দেশের বাজারে রডের টন সর্বোচ্চ ৮১ হাজার টাকায় উঠেছিল, যা তখন ইতিহাসের রেকর্ড দাম ছিল। তার আগে ওয়ান/ইলেভেনের (২০০৭-০৮) সরকারের সময় প্রতি টন রডের দাম সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। এরপর গত জানুয়ারি মাসেই ৮০ হাজার টাকায় উঠে প্রতি টন রডের দাম।


শেয়ার করুন