রাশিয়ার হামলা ঠেকাতে ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ইউক্রেনকে আর্থিক ও সামরিক সহায়তা দিচ্ছে যে সব দেশ তার প্রথম সারিতেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি। জার্মানির বিরুদ্ধে ‘যথেষ্ট’ সরবরাহ না করার অভিযোগ এনেছে ইউক্রেনসহ একাধিক দেশ। এর মাঝে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েন জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস। এবার জার্মান সরকার তাদের নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনলো। জানা গেছে. ইউক্রেনকে প্রায় ৫০টি বিমান-বিধ্বংসী ট্যাংক পাঠাচ্ছে দেশটি। মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টিন ল্যামব্রেচ্ট এ ঘোষণা দেন।
জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী ঘোষণা দিয়ে বলেন, স্বাধীনতা ও শান্তির জন্য ইউক্রেনের সাহসী এবং গুরুত্বপূর্ণ লড়াইয়ে তারা কিভাবে আরও সমর্থন জোগাতে পারেন তার সম্ভাব্য সব পথই তারা খুঁজে দেখবেন।
মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) রামস্টেইন মার্কিন বিমানঘাঁটিতে বৈঠকে বসেন যুক্তরাষ্ট্রসহ ৪০টি দেশের প্রতিনিধিরা। ইউক্রেনকে সামরিক সহযোগিতা দেয়ার ব্যাপারে জরুরি আলোচনা হয় সেখানে। এর পরপরই এমন ঘোষণা আসলো জার্মানির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তরফে।
এ ঘোষণা অনুযায়ী, দেশটির ট্যাংক বিধ্বংসী এক হাজার ভারি অস্ত্র, ৫০০ স্টিংগার মিসাইল, প্রায় ৩ হাজার স্ট্রেলা মিসাইল এবং বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ পাঠাবে বার্লিন।
ষাটের দশকে নির্মিত ‘গেপাত ট্যাংকটি’ সংস্কার করেছে জার্মানি। এই ট্যাংকটি সাড়ে পাঁচশ’ কিলোমিটার পর্যন্ত হামলা চালাতে সক্ষম বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে ইউক্রেন সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়টিও জানান দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
এর আগে জানা যায়, জার্মান প্রতিরক্ষা নীতির আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারছেন না বর্তমান চ্যান্সেলর। ফলে ইউক্রেনকে আরও ভারি অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের জন্য সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে। জার্মানি তথা ন্যাটোকে যুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে ফেলতে চাননি শলৎস। তাই অস্ত্র সরবরাহের বদলে ইউক্রেনের অস্ত্র কেনার জন্য বিশাল আর্থিক সহায়তার উদ্যোগ নেওয়ারও কথা জানা যায়।
জার্মানির আইনমন্ত্রী মার্কো বুশমান বলেছেন, ইউক্রেনকে সাঁজোয়া গাড়ির মতো ভারি সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করলে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী- সেই পদক্ষেপ মোটেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার সমান হবে না। ইউক্রেনের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি। ফলে সে দেশকে অস্ত্র সরবরাহ করা আইনসম্মত। তিনি বলেন, এটাই জার্মান সরকারের অবস্থান।
সরকারি জোটের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে মতপার্থক্য তৈরি হয়। বিশেষ করে উদারপন্থি এফডিপি ও পরিবেশবাদী সবুজ দলের কয়েকজন নেতা ইউক্রেনের জন্য আরও সহায়তার পক্ষে মত দিচ্ছেন। সবুজ দলের রাজনীতিক আন্টন হোফরাইটার বলেন, জার্মান সরকার বাড়তি অর্থ বরাদ্দ করলে ইউক্রেনের এ মুহূর্তে তেমন লাভ হবে না। সে দেশকে দ্রুত প্রয়োজনীয় অস্ত্র সরবরাহ করা উচিত।
যুদ্ধের সময় ট্যাংকের মতো ভারি অস্ত্র সরবরাহের ঝুঁকি নিয়েও সংশয় দেখা দিচ্ছে। সহজেই সেগুলো শনাক্ত করে রাশিয়া সরাসরি হামলা চালাতে পারে, এমন আশঙ্কাও করছেন বিশেষজ্ঞরা।