সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর বর্ষীয়ান সদস্য আবুল মাল আবদুল মুহিতের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং ‘মত ও পথ’ সম্পাদক যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি।
আজ শনিবার এক শোকবার্তায় তিনি মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, আবুল মাল আবদুল মুহিত ছিলেন একাধারে বীর মুক্তিযোদ্ধা, লেখক, কূটনীতিক ও গবেষক। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী পদে দায়িত্ব পালন করে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় অগ্রণী ভূমিকা রেখে গেছেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে তা অপূরণীয়।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর বর্ষীয়ান সদস্য আবুল মাল আবদুল মুহিতের মৃত্যুতে সিলেটবাসী হারিয়েছেন তাদের একজন আপন মানুষকে। আমি এই কর্মবীরের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনার পাশাপাশি শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
উল্লেখ, সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর বর্ষীয়ান সদস্য আবুল মাল আবদুল মুহিত শুক্রবার রাত ১২টা ৫৬ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি… রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।
বার্ধক্যের নানা জটিলতায় সাবেক অর্থমন্ত্রী বেশ কিছুদিন থেকে অসুস্থ ছিলেন। মাঝে তাঁকে কয়েক দফায় হাসপাতালে ভর্তিও করা হয়।
শুক্রবার মধ্যরাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বার্তায় জানানো হয়, আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর গুলশান আজাদ মসজিদে আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রথম জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। এরপর সকাল সাড়ে ১১টায় জাতীয় সংসদ প্লাজায় তাঁর দ্বিতীয় জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে।
শনিবার দুপুর ১২টায় সাবেক এই অর্থমন্ত্রীর মরদেহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে দাফনের জন্য তাঁর মরদেহ সিলেটে নেওয়া হবে।
মুহিত ১৯৩৪ সালে সিলেটের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তৎকালীন সিলেট জেলা মুসলিম লীগের নেতা আবু আহমদ আবদুল হাফিজের দ্বিতীয় ছেলে মুহিত। তার মা সৈয়দ শাহার বানু চৌধুরীও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। মুহিতের ছোট ভাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।
ছাত্রজীবনে অত্যন্ত মেধাবী মুহিত ১৯৫১ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে আইএ পরীক্ষায় প্রথম স্থান, ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে বিএ (অনার্স) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম এবং ১৯৫৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে এমএ পাশ করেন। চাকুরিরত অবস্থায় তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নসহ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমপিএ ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস-এ (সিএসপি) যোগদানের পর মুহিত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান এবং কেন্দ্রীয় পাকিস্তান সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ১৯৭১ সালের ৩০ জুন পাকিস্তান সরকারের পক্ষ ত্যাগ করেন মুহিত। এরপর বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত তৈরি ও সমর্থন আদায়ে নেমে পড়েন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে যোগাযোগ করে সমর্থন আদায় করতে থাকেন।
মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ স্বাধীন হলে ১৯৭২ সালে পরিকল্পনা সচিবের দায়িত্ব নেন তিনি। ১৯৭৭ সালে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বহিঃসম্পদ বিভাগের সচিব হন মুহিত। ১৯৮১ সালে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে গিয়ে ‘অর্থনীতি ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে’ কাজ শুরু করেন ফোর্ড ফাউন্ডেশন ও আইএফএডি-তে।
১৯৮২-৮৩ সালে তখনকার এইচ এম এরশাদ সরকারের সময়ে প্রথমবারের মতো অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্বে আসেন মুহিত। দীর্ঘদিন বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরামর্শক হিসেবে কাজ করার পর দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি পান অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তার কাঁধেই রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মোট ১২ বার ও টানা ১০ বার বাংলাদেশের বাজেট ঘোষণা করার রেকর্ড গড়েন মুহিত।
মুক্তিযুদ্ধ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ইতিহাস, জনপ্রশাসন এবং রাজনীতি নিয়ে ৩০টির অধিক বই লিখেছেন মুহিত। জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মুহিতকে ২০১৬ সালের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পুরস্কারে’ ভূষিত করে সরকার।
