শ্রমজীবীদের জীবনমান উন্নয়নে মে দিবসে অঙ্গীকার হোক সবার

সম্পাদকীয়

র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি
র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। ফাইল ছবি

আজ ১ মে রোববার, মহান মে দিবস। শ্রমজীবীদের সংগ্রাম ও সংহতির দিন। পৃথিবীর সব শ্রমজীবীর অধিকার আদায়ের দিন। দাবি প্রতিষ্ঠার দিন। সংগ্রামে প্রেরণার দিন, অধিকার আদায়ের প্রতীকী দিন। ১৮৮৬ সালের এই তারিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা দৈনিক ১০ থেকে ১২ ঘণ্টার কর্মদিবসের বিপরীতে আটঘণ্টা কাজের দাবিতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় মহান মে দিবস।

বস্তুত মে দিবসের পথ ধরেই শ্রমিকশ্রেণির নানা অধিকার অর্জিত হয়েছে। দৈনিক কাজের সময় আটঘণ্টার দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বঞ্চনা ও শোষণ থেকে শ্রমজীবীদের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা নিয়ে প্রতিবছর দিবসটি আসে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণে গত দুইবছর দিবসটি বিভিন্ন দেশের শ্রমিকের কাছে উপস্থিত হয় কর্মহীনতার সময়।

স্বস্তিদায়ক খবর হলো, গত দুইবছরের তুলনায় এবার পরিস্থিতি ভালো। করোনার দুুঃসহ পরিস্থিতিতেও মে দিবসের ত্যাগ-তিতিক্ষাময় অদম্য অক্লান্ত সেই সংগ্রামের স্মৃতি থেকে প্রেরণা ও শক্তি অর্জন করেছেন শ্রমজীবীরা।

বিশ্বের কোনো দেশেই দিবসটি পালন এখন আর শুধু শ্রমিকশ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, সর্বজনীন। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দেশে দিবসটি পালন হয়। অন্য বছরের মতো এবারও দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন হচ্ছে। এ উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি। এবারের দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক একতা, উন্নয়নের নিশ্চয়তা’।

সভ্যতার বিকাশের পরতে পরতে জড়িয়ে আছে শ্রমজীবীদের ঘাম-শ্রম। সমাজের অন্য সব পেশায় কর্মরতদের মতো তারাও মর্যাদাসম্পন্ন শ্রেণির। যদিও তা মূল্যায়নের দৃষ্টিভঙ্গিতে বৈষম্য আছে বিভিন্ন সমাজে। তবে তা থাকা অনুচিত বলে আমরা মনে করি। মে দিবসে মত ও পথ পরিবারের পক্ষ থেকে দেশের সব শ্রমজীবী মানুষের প্রতি আমাদের অকৃত্রিম অভিনন্দন ও অফুরন্ত শুভেচ্ছা। বিশ্বের শ্রমজীবীদেরকে শুভেচ্ছা ও সংহতি জানাই।

শিকাগোর ওই শ্রমিক আন্দোলনের অধ্যায়কে স্মরণীয় করে রাখতে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক প্যারিস কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৮৯০ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে পালিত হয়ে আসছে মে দিবস। এর চেতনা ও আদর্শ বৈষম্য হ্রাস ও সমতা সৃষ্টির পথে মানবসভ্যতাকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। আমাদের প্রিয় স্বদেশও এই প্রক্রিয়ার বাইরে নেই।

দেশের শ্রম পরিবেশ অতীতের চেয়ে বেশ এগিয়েছে। শ্রমজীবীদের অধিকার, বিশেষ করে মজুরি, কাজের পরিবেশ, সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদির ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। তাদের কল্যাণে দেশে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তাদের সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে শ্রম আইনকে যুগোপযোগী করা হয়েছে। বর্তমান সরকার পোশাকসহ অন্যান্য শ্রমিকের সর্বনিম্ন বেতন ধার্য করেছে, যা ইতিবাচক।

বিভিন্ন খাতে কর্মরত শ্রমজীবীদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন গঠন করেছে সরকার। এর তহবিল থেকে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত শ্রমিকরা আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন। এসব উদ্যোগে তাদের সার্বিক চাহিদা ও কল্যাণ পুরোপুরি সুনিশ্চিত হয়েছে, তা বলা যাবে না।

শ্রমিকশ্রেণির অধিকার দেশে সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত হলেও অনেক ক্ষেত্রে তা মানা হয় না বলে অভিযোগ আছে। বিশ্বায়ন ও মুক্তবাজার অর্থনীতির ফলে অর্থনৈতিক গতিশীলতা ও সমৃদ্ধি বাড়ার পাশাপাশি বৈষম্যও বাড়ছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় শ্রমিকদের দুর্ঘটনায় বিভিন্ন সময় প্রাণ দিতে হয়। যা দুঃখজনক।

ভবন নির্মাণ শ্রমিকদের নিরাপত্তার অভাব দেখা যায়। শ্রমজীবীদের জীবনমানের উন্নয়নে অঙ্গীকার করতে হবে আমাদেরকে। বিশেষ করে, বিশ্বায়ন ও প্রযুক্তির যুগে শ্রমিক অধিকার নিয়ে আমাদেরকে নতুন করে ভাবতে হবে।

শেয়ার করুন