ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দনবাস অঞ্চলেও রুশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা। শনিবার (৩০ এপ্রিল) এ অঞ্চলের তিনটি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালালেও তা দখলে নিতে ব্যর্থ হয়েছে রাশিয়া।
ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ দৈনিক হালনাগাদ তথ্যে জানিয়েছেন, পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্কের লিমান ও সেভিরোদোনেৎস্ক এবং লুহানস্কের পোপাসনা এলাকা দখলে নিতে হামলা চালান রুশ সেনারা। তবে তাঁদের প্রতিহত করে দিয়েছেন ইউক্রেনের সেনারা। ওই এলাকায় এখনো দুই পক্ষের লড়াই চলছে বলেও জানানো হয়েছে।
দুই মাসের বেশি সময় ধরা চলা যুদ্ধে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ দখলে নিতে সফল হয়নি মস্কো। তবে ইউক্রেন থেকে অর্ধকোটির বেশি মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছেন। রুশ বাহিনী এখন পূর্ব ও দক্ষিণ ইউক্রেনে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
আগে থেকে দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলের ওপর রুশপন্থীদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। অঞ্চল দুটিতে পৃথক দুটি প্রজাতন্ত্র গঠনের ঘোষণাও দিয়েছেন রুশপন্থীরা। তবে মস্কো ওই দুই অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চায়। এ জন্য তারা হামলা অব্যাহত রেখেছে। আর ইউক্রেনের সেনারা তাদের প্রতিহত করছেন।
লুহানস্কের গভর্নর সারহি গাইদি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, রাতভর পুরো অঞ্চলে গোলা ছুড়েছেন রুশ সেনারা। তবে তাঁদের লক্ষ্য পূরণ হয়নি। রুশ হামলার মুখে চরম সংকটে পড়েছেন স্থানীয় লোকজন। হামলার কারণে নিরাপদ জায়গায় তাঁদের সরে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এদিকে গত শুক্রবারের হামলায় লুহানস্কের রুবিজি ও পোপাসনায় দুটি বিদ্যালয় ও অন্তত ২০টি বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে বলেও জানিয়েছেন সারহি।
অন্যদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গতকাল রাতে ইউক্রেনের ৩৮৯টি লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছেন রুশ সেনারা। শুক্র ও শনিবার দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলের দনবাসে ও এর আশপাশেও একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া।
নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ শনিবার প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে পশ্চিমা দেশগুলোকে রাশিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যরা যদি সত্যিই ইউক্রেন সংকটের সমাধান চায়, তবে তাদের রাশিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে। ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ থেকে সরে আসতে হবে। আমি জানি, এটা খুবই জটিল একটি প্রক্রিয়া। কিন্তু এর বিকল্প নেই। ইউক্রেনের সঙ্গে চলমান শান্তি আলোচনা এগিয়ে নিতে এটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।’
তবে মস্কোর সঙ্গে শান্তি আলোচনা এগিয়ে নিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পূর্বশর্ত মানতে নারাজ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তাঁর ভাষ্য, নিষেধাজ্ঞা থাকা না থাকার বিষয়টি দর–কষাকষির অস্ত্র হতে পারে না। গত শুক্রবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট সতর্ক করে বলেছেন, বেসামরিক মানুষ হত্যার খেলা অব্যাহত রাখলে মস্কোর সঙ্গে শান্তি আলোচনার পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
শস্য লুটের অভিযোগ
মস্কোর বিরুদ্ধে শস্য লুটপাটের অভিযোগ এনেছে ইউক্রেন। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের কৃষি উপমন্ত্রী তারাস ভিসোতস্কি বলেছেন, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইউক্রেনের অনেক এলাকা রুশ সেনাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এসব এলাকা থেকে লাখ লাখ টন শস্য লুট করেছে রাশিয়া। শনিবার ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ তোলেন। তারাস ভিসোতস্কি বলেন, ১৫ লাখ টন শস্যের বেশির ভাগ লুট করা হয়েছে। তবে এ অভিযোগ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি মস্কো।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। অভিযানে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর জানা গেছে। ইউক্রেনে রুশ সামরিক বাহিনীর বোমাবর্ষণ ও কৃষ্ণসাগরের বিভিন্ন বন্দরে অবরোধের জেরে ব্যাহত হয়েছে শস্য উৎপাদন ও সরবরাহ। আন্তর্জাতিক বাজারে শস্য ও ভোজ্যতেল রপ্তানিতে বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর একটি ইউক্রেন। ইউরোপের ‘রুটির ঝুড়ি’ হিসেবেও দেশটির পরিচিতি রয়েছে। ইউক্রেনে রুশ হামলায় বিশ্ববাজারে খাবারের দামে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
সেনা পাঠাবে যুক্তরাজ্য
পূর্ব ইউরোপজুড়ে আট হাজার সেনা মোতায়েন করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। রাশিয়ার ইউক্রেনে হামলার পর শক্তি দেখানোর সামরিক মহড়ায় অংশ নেবেন সেনারা। গতকাল শুক্রবার এ সিদ্ধান্তের কথা জানায় যুক্তরাজ্য।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফিনল্যান্ড থেকে উত্তর মেসিডোনিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত মাসব্যাপী ওই সামরিক মহড়ায় ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্রের মতো মিত্ররাও অংশ নেবে।
এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেন, ইউরোপের নিরাপত্তা কখনোই এত গুরুত্ব পায়নি। শীতল যুদ্ধের পরে এটা অন্যতম বড় যৌথ সেনা মোতায়েন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।