রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ক্যানসারের অস্ত্রোপচার করতে যাচ্ছেন। অস্ত্রোপচারের সেই সময়ে সাময়িকভাবে দেশটির কট্টরপন্থী সাবেক পুলিশ প্রধান নিকোলাই প্যাটরুশেভের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারেন তিনি। রাশিয়ার রহস্যময় টেলিগ্রাম চ্যানেল ‘জেনারেল এসভিআর’র বরাত দিয়ে মার্কিন দৈনিক নিউইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে এই দাবি করা হয়েছে।
রাশিয়ার ফরেন ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের সাবেক লেফটেন্যান্ট জেনারেল ভিক্টর মিখাইলোভিচ (ছদ্মনাম) ওই টেলিগ্রাম চ্যানেল পরিচালনা করেন। সেই চ্যানেলে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে তিনি দাবি করেছেন, অস্ত্রোপচারের প্রক্রিয়া চলাকালীন এবং পরে প্রেসিডেন্ট পুতিন রাশিয়ার সরকারের নিয়ন্ত্রণ রুশ ফেডারেল পুলিশের নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান নিকোলাই প্যাটরুশেভের কাছে হস্তান্তর করবেন।
জেনারেল ভিক্টর মিখাইলোভিচ বলেছেন, চিকিৎসকরা প্রেসিডেন্ট পুতিনকে জানিয়েছেন যে, তাকে অবশ্যই একটি অস্ত্রোপচার করাতে হবে। অসমর্থিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রত্যাশিত অস্ত্রোপচার এবং পরবর্তী প্রক্রিয়া পুতিনকে ‘স্বল্প সময়ের’ জন্য অক্ষম করে তুলতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
ভিডিওর ভাষ্যকার বলেছেন, দীর্ঘ সময়ের জন্য ক্ষমতা হস্তান্তরে পুতিনের রাজি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে ফেডারেল পুলিশের নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান নিকোলাই প্যাটরুশেভের কাছে তিনি দুই থেকে তিন দিনের জন্য ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারেন।
ভিডিওর ভাষ্যকার আরও বলেছেন, ‘আমি এটাকে সবচেয়ে খারাপ বিকল্প বলবো। প্যাটরুশেভ একজন খলনায়ক। ভ্লাদিমির পুতিনের চেয়ে তিনি ভালো নন। এছাড়া তিনি আরও বেশি ধূর্ত এবং আমি বলবো, ভ্লাদিমির পুতিনের চেয়েও বেশি প্রতারক তিনি। প্যাটরুশেভ ক্ষমতায় এলে রাশিয়ানদের সমস্যা আরও বৃদ্ধি পাবে।’
‘ভিক্টর মিখাইলোভিচ ইঙ্গিত দিয়েছেন, এটা যাতে না ঘটে সেজন্য তিনি এবং তার মিত্ররা কিছু পদক্ষেপ নেবেন। আমি আশা করছি, আমরা সফল হবো।’
এই প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে সোমবার প্রশ্ন করা হলে পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, এটা এখনই নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘আমি এমন কিছু দেখতে পাইনি, যা এটাকে ব্যাখ্যা করতে সহায়তা করবে।’
ভিডিওটিতে রাশিয়ান অনুসন্ধানী গণমাধ্যম দ্য প্রজেক্টের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, রাশিয়ার শক্তিশালী রাষ্ট্রনেতা ভ্লাদিমির পুতিন গত কয়েক বছরে একজন ক্যানসার চিকিৎসকের কাছে অন্তত ৩৫ বার গেছেন। তিনি নিজের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে এতটাই উন্মাদ হয়েছেন যে, তিনি অপ্রচলিত এবং আদিম থেরাপিও নিয়েছেন।
ক্যানসার নিরাময়ের আশায় হরিণের শিং যখন নরম ও রক্তপিণ্ডের মতো থাকে তখন তা কেটে সংগৃহীত রক্তে পুতিন গোসল করেছেন, এমন কথাও বলা হয়ে থাকে বলে দাবি করেছে গণমাধ্যমটি। কাজাখস্তান এবং মঙ্গোলিয়া সীমান্তের কাছে রাশিয়ার আলতাই অঞ্চলে রোগমুক্তি পাওয়ার আশায় হরিণের শিংয়ের রক্তে গোসল করার কুসংস্কার প্রচলিত আছে।
দ্য প্রজেক্ট বলছে, এই কুসংস্কারে বিশ্বাসীদের মতে, হরিণের রক্তে গোসলের ফলে কার্ডিওভাসকুলার ব্যবস্থার উন্নতি এবং ত্বক সজীব হয়ে ওঠে।
এদিকে, দ্য প্রজেক্ট রাশিয়ার একজন ক্যানসার বিশেষজ্ঞের পরিচয় প্রকাশ করেছে, যার কাছে গত চার বছরে ভ্লাদিমির পুতিন সোচি গেটওয়ের বাসা থেকে গোপনে কয়েক ডজন বার গেছেন। প্রতিবেদনে গত শরতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গোপনে অস্ত্রোপচার করেছেন বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
‘চিকিৎসার ব্যাপারে জানাশোনা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের ধারণা, পুরো সময়টাতে পুতিন থাইরয়েডের কিছু রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি জটিল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেছেন।’ পুতিনের ক্যানসারের উন্নতি ঘটছে বলে শনিবারের ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে। তবে ভাষ্যকার বলেছেন, তিনি দর্শকদের মিথ্যা আশা দিতে চান না।
সম্প্রতি প্রকাশ্যে এবং সরকারি গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকের সময় রুগ্ন চেহারা ও অস্বাভাবিক উদাসীন দেখা যায় ৭০ বছর বয়সী পুতিনকে। পরে পারকিনসন-সহ ক্যান্সার এবং অন্যান্য গুরুতর রোগে তিনি আক্রান্ত হয়েছেন বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে।
গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত একটি টেলিগ্রাম পোস্টে বলা হয়, সাবেক পুলিশ প্রধান নিকোলাই প্যাটরুশেভ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে দুই ঘণ্টা খোলামেলা আলোচনা করেছেন। পোস্টে দাবি করা হয়েছে, আমরা জানি, প্যাটরুশেভকে পুতিন ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তিনি রাশিয়ার বর্তমান সরকারের একমাত্র বিশ্বস্ত মিত্র এবং বন্ধু হিসাবে বিবেচনা করেন। এছাড়া যদি শরীর খারাপের দিকে মোড় নেয় তাহলে দেশের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ সাময়িকভাবে প্যাটরুশেভের হাতে চলে যাবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পুতিন।
এর আগে, এপ্রিলের শুরুতে ওই টেলিগ্রাম চ্যানেলের পোস্টের লেখকরা দাবি করেছিলেন, পুতিনের চিকিৎসকরা এপ্রিলের শেষের দিকে অস্ত্রোপচারের সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু পরে তা আর করা হয়নি। জেনারেল এসভিআর ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে প্রেসিডেন্ট পুতিনের ক্যানসার আক্রান্তের বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। এই টেলিগ্রাম চ্যানেলের দাবি, রুশ স্বৈরশাসক পুতিন অন্ত্রের ক্যানসারে ভুগছেন।
পুতিনের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে গত মাসে নতুন করে প্রশ্ন দেখা দেয়। ওই সময় দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুর সাথে বৈঠকের সময় টেবিলের এক কোণ শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে থাকতে দেখা যায় পুতিনকে। তবে পুতিনের অসুস্থতার খবরকে বরাবরই অস্বীকার করেছে ক্রেমলিন।