ভোজ্যতেলের রেকর্ড দাম নির্ধারণের বিষয়টি দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় তুলেছে বললে অত্যুক্তি হবে না। শুক্রবার দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ সচিবের সভাপতিত্বে বৈঠকের পর বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৩৮ আর খোলা সয়াবিনের দাম বাড়ানো হয়েছে ৪৪ টাকা। বেড়েছে পাম অয়েলের দামও।
অবাক হয়েছি জেনে- ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী সমিতির নির্ধারণ করা এই নতুন দামে সায় দিয়েছে সরকার! বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভোক্তার স্বার্থ না দেখে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় অধিক মনোযোগ দিয়ে যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা কি অনাকাঙ্ক্ষিত নয়? তাছাড়া, একদিকে সংশ্নিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত মহলের অদূরদর্শিতা, অন্যদিকে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতির দায় তো সরকার এড়াতে পারে না। এখন আবার অস্বাভাবিক হারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে সংকট মেটানোর যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
আমরা জানি, ভোজ্যতেলের দাম সহনীয় রাখতে সরকার উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর প্রত্যাহার করার পাশাপাশি আমদানি করও কমিয়েছিল। সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দাবি, বাজারে তদারকিও বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু এর কোনো কিছুর সুফলই ভোক্তারা পাননি। বরং কয়েক মাস ধরেই বাজারে ভোজ্যতেলের সংকটে ভোক্তারা যখন নাকাল, তখনই অস্বাভাবিক হারে আরেক দফা দাম বাড়ানোর ঘোষণা এলো এবং তা কার্যকরও হলো। এমন এক সময় এ ঘোষণা এলো, যখন নানা কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির ফলে জনজীবন এমনিতেই বিপর্যস্ত।
একটি বিষয় বিবেচনায় রাখা জরুরি যে, বাজারের স্বাভাবিক ধর্ম, সরবরাহ নির্বিঘ্ন রাখলে দাম কমবে। তাই, সরকারি উদ্যোগে দ্রুত আমদানি করে টিসিবিসহ ভোক্তা পর্যায়ে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ন্যায্য দামে ভোজ্যতেল বিক্রি নিশ্চিত করা হোক। সেইসঙ্গে ভোজ্যতেলের বর্ধিত দাম পুনর্বিবেচনা করে সবার আগে ভোক্তার স্বার্থ দেখার দাবি জানাচ্ছি । কারণ, জনগণের সরকার কোনো গোষ্ঠীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়তে পারে না।
লেখক : কবি ও সাংবাদিক