প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ডেলটা প্ল্যান-২১০০’ বাস্তবায়নে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তা চেয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, এটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আজ সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গণভবনে যান এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট (অপারেশনস-১) শি ঝিন চেন। এই সাক্ষাৎকালে সহায়তা চান প্রধানমন্ত্রী। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদেরকে ব্রিফ করেন।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ করে যোগাযোগ, বাণিজ্য ও জ্বালানির ক্ষেত্রে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য এডিবির সহায়তা কামনা করেন। এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
শি ঝিন চেন বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে। এডিবি বাংলাদেশের পাশে থাকবে। এ দেশের গ্রামীণ ও নগর উন্নয়নের ক্ষেত্রে সহায়তা অব্যাহত রাখবে।
এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে।
শি ঝিন চেন আরও বলেন, এডিবি আশা করছে, বাংলাদেশ জিডিপিতে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হবে।
বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে (উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্নাতক হওয়ার কারণে), যা সাধারণত একটু জটিল। কিন্তু বাংলাদেশ ভালো করছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দেশবাসী দুই বছর পর এবার অবাধে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্যাপন করেছে। মহামারির সময়ে এডিবির সহযোগিতার ভূয়সী প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।
উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের স্নাতক হওয়ার কারণে ক্রান্তিকাল সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। সরকার এখন দেশের গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষকে উন্নত ও সুন্দর জীবন দেওয়ার লক্ষ্যে জমিসহ বাড়ি দিচ্ছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব খাদ্যঘাটতির সম্মুখীন হতে পারে বলে এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্টের অনুমানের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার আরও বেশি খাদ্য উৎপাদনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, দেশের আইসিটি খাতের উন্নয়ন হচ্ছে।
উন্নয়নের জন্য আঞ্চলিক যোগাযোগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে দরজা খুলে দিয়েছে। ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের পর যেসব রুট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, সেগুলো আবার চালু করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নে আঞ্চলিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য এডিবির শীর্ষ ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনে বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়োগ প্রত্যাশা করেন।
এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ অন্যতম সেরা উদাহরণ স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ কৃষি খাতেও ব্যাপক উন্নয়ন করেছে।
শি ঝিন চেন আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশে যেসব বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হচ্ছে, তা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা পূরণ করবে। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বাংলাদেশকে সাহায্য করতে এডিবির আগ্রহের কথা প্রকাশ করেন শি ঝিন চেন।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন। এ ছাড়া এডিবির ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (সাউথ এশিয়ান ডিপার্টমেন্ট) মনমোহন পরকাশ ও বাংলাদেশে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর অ্যাডিমন গিনটিং উপস্থিত ছিলেন।