দেশে আমদানি ব্যাপক হারে বেড়েছে, তবে সেই তুলনায় রপ্তানি আয় হয়নি। ফলে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৪৯০ কোটি ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
রোববার (৮ মে) বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) যে হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে এ তথ্য উঠে এসেছে। বাণিজ্য ঘাটতির এ অঙ্ক জাতীয় বাজেট অর্থাৎ ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার এক-তৃতীয়াংশের বেশি। আগের অর্থবছরের একই সময় ঘাটতির এ পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫২১ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
আমদানির তুলনায় পণ্য রপ্তানি কম হওয়ায় বরাবরই বাংলাদেশ বাণিজ্য ঘাটতিতে থাকে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আমদানি ব্যাপক হারে বেড়েছে। আর এতে আমদানি-রপ্তানির মধ্যে বড় ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে বড় বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে দেশ। তবে এর রেকর্ড আমদানির আড়ালে অর্থ পাচার হচ্ছে কি না সেই বিষয় নজর দেয়ার কথা বলেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি। এ কারণেই বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ন্ত। কিন্তু আমাদের যে বিষয়টিতে সতর্ক হতে হবে, তা হলো যেসব আমদানির পেমেন্ট করা হচ্ছে। তা আসলে দেশে আসছে কি না? না কি আমদানির আড়ালে অর্থ পাচার হচ্ছে।
তিনি বলেন, অর্থ পাচারের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক কাস্টমস ও এনবিআরকে দেখতে হবে। পণ্য আমদানিতে অনেক রকম ছল-চাতুরী হয়ে থাকে। খালি কন্টেইনার এসে অর্থ চলে যায়। নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোকে এসব বিষয় কঠোরভাবে তদারকি করতে হবে।
পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে রপ্তানি বেড়েছে ৩২ দশমিক ৯২ শতাংশ। অন্যদিকে আমদানি বেড়েছে ৪৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আলোচিত নয় মাসে রপ্তানি থেকে দেশ আয় করেছে তিন হাজার ৬৬২ কোটি ডলার। পণ্য আমদানির পেছনে ব্যয় হয়েছে ৬ হাজার ১৫২ কোটি ডলার। আমদানি ব্যয় থেকে রপ্তানি আয় বাদ দিলে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় দুই হাজার ৪৯০ কোটি ডলার।
আলোচিত সময়ে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতিও বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে সেবা খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ৭০৮ কোটি ডলার। অন্যদিকে সেবা খাতে দেশের ব্যয় হয়েছে ৯৮৯ কোটি ডলার। সেবা খাতের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৮০ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ১৯৯ কোটি ডলার।
চলতি হিসাব ভারসাম্য (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স) ঘাটতিতে
চলতি হিসাব ভারসাম্য (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স) বড় ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে এ ঘাটতির (ঋণাত্মক) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১৪০ কোটি ৭০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে ঘাটতি ছিল ৫৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
সামগ্রিক লেনদেনে ঘাটতি ৩ দশমিক ০৯ বিলিয়ন ডলার
সামগ্রিক লেনদেনে (ওভারঅল ব্যালেন্স) ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ সূচকে ৬৯৯ কোটি ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল।
কমেছে রেমিটেন্স
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত দেশে ১ হাজার ৫৭৮ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে এসেছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ কম।
এফডিআই বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৭২ শতাংশ
দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে। গত অর্থবছরের জুলাই-মার্চে ২৬১ কোটি ৩০ লাখ ডলারের এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে ৩৪৯ কোটি ৪০ লাখ ডলারে পৌঁছেছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সরাসরি মোট যে বিদেশি বিনিয়োগ আসে, তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকে, তাকে নিট এফডিআই বলা হয়। আলোচিত সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগও আগের বছরের চেয়ে ৪৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেড়ে ১৬৭ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত বছর একই সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ১১৪ কোটি ডলার।