আমরা বঙ্গবন্ধু ও রবীন্দ্রনাথের দর্শনের ধারে কাছেও নাই : মোকতাদির চৌধুরী

মোহাম্মদ সজিবুল হুদা

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ একটি বিস্ময়কর বিষয়। রবীন্দ্রনাথ মাকে দেশের সাথে একাকার করে দেখেছেন। আমাদের যে জাতীয় সঙ্গীত (বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ জাতীয় সঙ্গীত) সেখানে মায়ের ব্যবহারটা কত সুনিপুণভাবে করেছেন। তিনি বাংলাদেশের সমবায় আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, ছোটগল্পকার, সংগীতশিল্পী, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, দার্শনিক, চিত্রশিল্পী ও শিক্ষাবিদ। তিনি তাঁর ছেলেদেরকে কৃষির ওপর শিক্ষা দিতে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন। কারণ তিনি সমবায় আন্দোলনকে কৃষিভিত্তিক আন্দোলনে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। তিনি দরিদ্র মানুষের জীবন ও জীবীকার উন্নয়নে কাজ করেছিলেন।

৮ মে (রোববার) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

universel cardiac hospital

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, আমাদের সবচেয়ে প্রিয় মানুষ বঙ্গবন্ধু, আর বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে প্রিয় মানুষ ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর একটি আত্মিক সম্পর্ক ছিল। রবীন্দ্রনাথের কবিতার ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলোরে’ এই অংশটিকে বঙ্গবন্ধু হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করেছিলেন। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা পেশ করার পর থেকে বঙ্গবন্ধুকে একাই চলতে হয়েছে। ১৯৬৬ সালের পর বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি বক্তব্যেই রবীন্দ্রনাথের ‘নাগিনীরা চারিদিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস’ চরণটির উচ্চারণ করেছেন।

তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ রাজনীতি করেননি, তবে এটাও ঠিক; যখন জালিওয়ানাবাগে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ হয়েছিল তখন ঐ ঘটনার প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ তাঁর নাইট উপাধি ত্যাগ করেছিলেন। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনকে যারা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন- মহাত্মা গান্ধী, জহরলাল নেহরু, এমনকি আমাদের শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক তিনিও কিন্তু রবীন্দ্রনাথের ভক্ত ছিলেন।

মোকতাদির চৌধুরী আরও বলেন, বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের বাহিরে কিছু ভাবাই যায় না। তাকে বাদ দিয়ে বাঙালির জীবনকে কল্পনা-ই করা যায় না। অনেকে বলতে পারেন, রবীন্দ্রনাথ মুসলমানদের নিয়ে তেমন কিছু লেখেননি। কিন্তু একথার জবাবও রবীন্দ্রনাথ দিয়ে গেছেন, তিনি বলেছেন- ‘আমি তো তাদের (মুসলমানদের) জীবন সম্পর্কে তেমন কিছু জানিনা’।

তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশের মানুষের জন্যই কবিতা, গল্প, গান, নাটক, উপন্যাস লিখেছেন, ছবি এঁকেছেন, সমবায় আন্দোলন করেছেন মানুষের সমৃদ্ধির জন্য। তিনি শিক্ষার জন্য তাঁর মতো করে একটি শিক্ষাব্যবস্থা দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছেন, কিন্তু আমার সেই শিক্ষাব্যবস্থাকে নিতে পারিনি।৷ আমরা এখনও ইংরেজদের প্রবর্তিত কেরানী গড়ার যে শিক্ষা সেই শিক্ষাতেই আবর্তিত আছি, যেখানে প্রকৃত সৃজনশীলতার যে শিক্ষা সেই শিক্ষায় আমরা যায়নি।

মত ও পথ সম্পাদক বলেন, এখন যেমন আমরা বঙ্গবন্ধুর দর্শনের কথা বলি, সারাদিন-ই বঙ্গবন্ধুর কথা বলতে থাকি, বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কোনো লোক কোথাও পাওয়া যাবে না, বিশেষ করে সরকারের কর্মচারীদের ভিতর তো বঙ্গবন্ধুর বাহিরের লোকই নাই, কিন্তু পার্থক্য হলো- বঙ্গবন্ধুর যে দর্শন, বঙ্গবন্ধুর যে চিন্তা তার সাথে কারও কোনো সম্পর্ক নাই। আমাদের আচার-আচরণ সবটাই হলো গনবিরোধী, আর বঙ্গবন্ধুর সবটাই ছিলো গণকল্যাণকর বা গণমুখী। সুতরাং আমরা আমাদের জীবনাচরণে বঙ্গবন্ধু ও রবীন্দ্রনাথের দর্শনের ধারে-কাছেও নাই।

প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ বলেন, যেকোনো জাতিকে ধ্বংস করতে হলে প্রথমে তার সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে হয়, তার ভাষাকে ধ্বংস করতে হয়, একইভাবে পাকিস্তান আমলে আমাদের এই দুইটা জিনিস ধ্বংসের চেষ্টা করা হয়েছিল। ১৯৬৭ সালে আইয়ুব সরকার রবীন্দ্র সংগীত বন্ধ করে দিয়েছিল, তখন এর বিরুদ্ধে রাজনীতিবিদদের মধ্যে সর্বপ্রথম যিনি কথা বলেছিলেন তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এটির একটি আলাদা তাৎপর্য রয়েছে। কারণ রাজনীতির সাথে যদি সংস্কৃতির সংমিশ্রণ হয়, সেই রাজনীতির একটি আলাদা চরিত্র হয়, আর সেই রাজনীতি হলো মানুষের প্রকৃত রাজনীতি, সেই রাজনীতি হলো মানুষের কল্যাণে নিবেদিত রাজনীতি।

শেয়ার করুন