যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় অংশীদার হতে চান

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইউএস–বাংলাদেশ বিজনেস সামিট অনুষ্ঠিত
ইউএস–বাংলাদেশ বিজনেস সামিট অনুষ্ঠিত। সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশের উন্নয়নের পথযাত্রায় অংশীদার হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা। সোমবার (৯ মে) ইউএস–বাংলাদেশ বিজনেস সামিটে এ আগ্রহের কথা জানান তারা। সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) ও ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল এ সামিটের আয়োজন করে।

ঢাকা সফররত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের সদস্যরা এ সামিটে অংশ নেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে এখন বিনিয়োগের সুবর্ণ সময় চলছে। এ সুযোগকে কাজে লাগাতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

ঢাকা-চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইস্পিড ট্রেন, সমুদ্র অর্থনীতি, হাইটেক পার্ক, দেশজুড়ে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কারণে বাংলাদেশকে পরবর্তী বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে বেছে নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য কর অব্যাহতি, ডিউটি ড্র ব্যাকসহ নানা সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। সফররত মার্কিন উদ্যোক্তাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানি, গ্যাস অনুসন্ধান, এলএনজি টার্মিনাল, ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো ওয়্যারহাউজ অ্যান্ড কোল্ড চেইন, অ্যাভিয়েশন, শিপিং ও বন্দর, অটোমোবাইল, হোটেল ও হসপিটালিটি, ব্যাংক ও ইন্স্যুরেন্স, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, ম্যান মেড ফাইবার খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।

অনুষ্ঠানে শেভরনের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের মিশন লিড জে আর প্রায়র বলেন, বাংলাদেশ অসাধারণ অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন করেছে। খুব বেশি দেশ শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দিতে পারেনি। বাংলাদেশ এই সাফল্য অর্জন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর দক্ষতা, সক্ষমতা রয়েছে। বাংলাদেশের ভিশন ২০৪১ অর্জনে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা দুই দেশের সহযোগিতার সম্পর্ক দৃঢ় করতে আগ্রহী।

তিনি জানান, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা খুবই আশাবাদী। সে কারণেই প্রতিনিধিদল ঢাকা সফরে এসেছেন।

এসময় ইউএস বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের পরিচালক সিদ্ধান্ত মেহরা বলেন, বাণিজ্য প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের কাছে বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্ভাবনা তুলে ধরবে।

উন্মুক্ত আলোচনায় এফবিসিআই’র সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, দুই দেশের বাণিজ্য ৯ বিলিয়ন ডলার, যা সম্ভাবনার তুলনায় কম। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে প্রতিনিধিদল কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত বলেও জানান তিনি।

এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, বাংলাদেশের হালকা প্রকৌশল, ইলেকট্রিক্যাল কম্পোনেন্টস আইওটি ও স্বাস্থ্যখাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের ভালো সুযোগ রয়েছে।

এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি এম এ মোমেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি সিইপিএ চুক্তি সইয়ের জন্য দ্বিপাক্ষিক আলোচনা শুরুর আহ্বান জানান।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রহমান বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি হস্তান্তরের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ একটি আদর্শ দেশ। বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুবিধা নিতে পারেন মার্কিন উদ্যোক্তারা।

ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র (ফিকি) সভাপতি নাসের এজাজ বিজয় জানান, বাংলাদেশে যেসব বিদেশি কোম্পানি রয়েছে, প্রত্যেকেই খুব মুনাফা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদেরও এই সুযোগ নেওয়া উচিত।

অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের দাম তূলনামূলক কম বলে জানান বেসিসের সভাপতি রাসেল টি আহমেদ। যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য আমদানির আহ্বান জানান তিনি।

বেক্সিমকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান এমপি জানান, বাংলাদেশের ইউইসএ সার্টিফায়েড অনেকগুলো ফার্মেসি প্ল্যান্ট রয়েছে। এদেশের ওষুধ কারখানাগুলো বিশ্বমানের যন্ত্র দিয়ে সজ্জিত। এছাড়া এ দেশের শ্রমশক্তিও তূলনামূলক স্বস্তা। তাই যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানির বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ সবচেয়ে আদর্শ গন্তব্য।

এসময় তুলা আমদানিতে ফিউমিগেশন পদ্ধতি বাতিলের আহ্বান জানান বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন।

অনুষ্ঠানে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে এফবিসিসিআই ও ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

সামিটে মার্কিন প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যরা ছাড়াও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এফবিসিসিআই’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, ভাইস প্রেসিডেন্ট এম এ মোমেন, মো. আমিনুল হক শামীম, মো. আমিন হেলালী, সালাহউদ্দীন আলমগীর, এম এ রাজ্জাক খান রাজ, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম, পরিচালক প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মেদ আলমগীর, আবুল কাসেম খান, শমি কায়সার, বাজুসের সভাপতি সায়েম সোবহান আনভীর, বাংলাদেশ এনার্জি কোম্পনি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আজম জে চৌধুরী, বাংলাদেশ কটন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ আইয়ুব, বিএবি এর চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার, এবিবি’র সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমানসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন