শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা আজ, শুরু হলো নব বুদ্ধবর্ষ ২৫৬৬

নিজস্ব প্রতিবেদক

আজ রোববার শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা। বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। তারা বুদ্ধপূর্ণিমা সাড়ম্বরে উদযাপন করবেন। ‘জগতের সব প্রাণী সুখী হোক’- এ অহিংস বাণীর প্রচারক গৌতম বুদ্ধের আবির্ভাব, বোধিপ্রাপ্তি ও মহাপরিনির্বাণের (মৃত্যু)- স্মৃতি বিজড়িত দিনটিকে বুদ্ধপূর্ণিমা হিসেবে পালন করেন বুদ্ধ ভক্তরা।

বৌদ্ধধর্মের অমর প্রবর্তক মহামতি রাজকুমার সিদ্ধার্থের বা গৌতম বুদ্ধের শুভজন্ম, বোধিজ্ঞান ও নির্বাণ লাভ- ত্রিস্মৃতি বিজড়িত বৈশাখী পূর্ণিমা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পবিত্র উৎসব। বিশ্বের সব বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর কাছে এটি বুদ্ধপূর্ণিমা নামে পরিচিত। বৌদ্ধ ধর্মমতে, আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে এ দিনে গৌতম বুদ্ধ আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাঁর জন্ম, বোধিলাভ ও মহাপ্রয়াণ বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে হয়েছিল বলে এর (বৈশাখী পূর্ণিমা) আরেক নাম হয় ‘বুদ্ধপূর্ণিমা’।

universel cardiac hospital

বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার আলাদা বাণীতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়সহ সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।

আজ শুরু হবে নতুন বুদ্ধবর্ষ ২৫৬৬ বুদ্ধাব্দ। সারাবিশ্বের বৌদ্ধধর্মাবলম্বী আজ যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদায় ও নানা আনুষ্ঠানিকতায় নব বুদ্ধবর্ষকে বরণ করবেন। জাতিসংঘের সদর দপ্তরেও আজ ‘বেশাখ ডে’ উদ‌যাপন হবে। সেখানে অন্যান্য দেশের দূতাবাসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রতিনিধিও উপস্থিত থাকবেন। দিনটি উপলক্ষে আজ দেশে সরকারি ছুটি।

বৌদ্ধ সাহিত্য থেকে জানা যায়, পূর্বজন্মে বোধিসত্ব সব পারমি পূরণ করে সন্তোষকুমার নামে যখন স্বর্গে অবস্থান করছিলেন, তখন দেবতারা তাঁকে জগতের মুক্তি এবং দেবতা ও মানুষের নির্বাণ পথের সন্ধান দানের জন্য মনুষ্যকূলে জন্ম নিতে অনুরোধ করেন। দেবতাদের অনুরোধে বোধিসত্ব সর্বদিক বিবেচনায় এক আষাঢ়ী পূর্ণিমায় স্বপ্নযোগে মাতৃকুক্ষিতে প্রতিসন্ধি গ্রহণ করেন। পরবর্তী এক শুভ বৈশাখী পূর্ণিমায় জন্ম নেন তিনি।

তাঁর জন্ম হয়েছিল লুম্বিনী কাননের শালবৃক্ষ ছায়ায় উন্মুক্ত আকাশতলে। তাঁর কাছে জাতি, শ্রেণি ও গোত্রের কোনো ভেদাভেদ ছিল না। তিনি মানুষকে মানুষ ও প্রাণীকে প্রাণিরূপেই জানতেন। এর প্রাণসত্তার মধ্যে যে কষ্টবোধ আছে, তা তিনি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতেন। তাই তিনি বলেছিলেন, ‘সবেব সত্তা ভবন্তু সুখীতত্তা’- জগতের সব প্রাণী সুখী হোক।

বুদ্ধপূর্ণিমার দিনে সাধারণত বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ বুদ্ধপূজাসহ পঞ্চশীল, অষ্টশীল, সূত্রপাঠ, সূত্রশ্রবণ, সমবেত প্রার্থনা ও নানাবিধ মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
এই পুণ্যোৎসবে বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা স্নান করেন, আবার শুচিবস্ত্র পরিধান করে মন্দিরে মন্দিরে বুদ্ধের বন্দনায় রত থাকেন।

পূজা ও আচার-অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। সারাদেশে আজ রাষ্ট্রীয় ছুটির দিনের শুরুতে শান্তি শোভাযাত্রা, বুদ্ধ মঠ ও মন্দিরগুলোতে দিনব্যাপী প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, পূজা ও প্রার্থনার আয়োজন করেছেন বুদ্ধের আদর্শ অনুসারীরা।

বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে রাজধানীসহ দেশজুড়ে বৌদ্ধ বিহারগুলোতে বুদ্ধপূজা, প্রদীপ প্রজ্বলন, শান্তি শোভাযাত্রা, ধর্মীয় আলোচনা সভা, প্রভাত ফেরি, সমবেত প্রার্থনা, আলোচনা সভা ও বুদ্ধপূজা হবে। এ ছাড়াও মানব জাতির সর্বাঙ্গীণ শান্তি ও মঙ্গল কামনায় বিশেষ প্রার্থনা করা হবে।

শেয়ার করুন