খারকিভ থেকে হটেছে রুশ সেনা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

খারকিভের সীমানা ছাড়ার আগে একটি সাংস্কৃতিক জাদুঘর গুড়িয়ে দেয় রুশ সেনারা। ছবি : বিবিসি

ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের সীমানা থেকে রুশ সেনাদের অনেক দূরে হটিয়ে দিয়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। সুপরিচিত সামরিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার মন্তব্য করেছে, ‘ইউক্রেন সম্ভবত খারকিভের যুদ্ধ জিতে গেছে।’ বিদেশি সাংবাদিকরাও এর পক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছেন। ইউক্রেন যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে না দিলেও একে একটি বড় বিজয় বলছেন পর্যবেক্ষকরা।

এদিকে অতিথি হিসেবে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডকে গতকাল শনিবার এক বৈঠকে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ন্যাটো দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা সামনে রেখে তাঁদের আমন্ত্রণ জানানো হলো।

উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের খারকিভ শহরটি ঘিরে রেখে টানা গোলা ও বোমাবর্ষণ করে যাচ্ছিল রুশ বাহিনী। কিন্তু তারা শহরটির প্রতিরক্ষা ভেঙে ভেতরে প্রবেশে ব্যর্থ হয়। শহরটির জনগণের মনোবলও ছিল অটুট। শেষ পর্যন্ত রুশ সেনারা হাল ছেড়ে দিয়ে এলাকা ত্যাগ করেছে বলে উল্লেখ করেছে ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার।

একই দাবি করেছেন খারকিভের মেয়র ইহর তেরেখভ। তিনি বলেছেন, রাশিয়ার সেনারা শহর থেকে অবস্থান তুলে নিয়ে রুশ সীমান্তের দিকে সরে যাচ্ছে।

মেয়র তেরেখভের তথ্য অনুসারে, রাশিয়ার সেনারা উত্তর-পূর্বের শহরটির শুধু ছোট একটি অংশে একবারই ঢুকতে পেরেছিল। তারা সেখানে বেশি সময় থাকতে পারেনি। মেয়র বলেন, ‘খারকিভের আঞ্চলিক প্রতিরোধ বাহিনী ও ইউক্রেনীয় নিয়মিত সশস্ত্র বাহিনীর প্রচেষ্টায় রুশ সেনারা শহর অঞ্চল থেকে দূরে সরে রাশিয়ার সীমান্তের দিকে চলে গেছে।’

খারকিভের মেয়র বলেন, ‘শহর এখন শান্ত। মানুষ খারকিভে ফিরে আসতে শুরু করেছে। সব নাগরিককে পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ চালু করে সহযোগিতা করা হচ্ছে। তবে অনেক আবাসিক ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। ভবিষ্যতে বড় মাপের পুনর্নির্মাণে হাত দিতে হবে।
মেয়র জানান, গত পাঁচ দিনে শহরে কোনো বোমাবর্ষণ হয়নি। রুশ সেনারা শুধু একবার খারকিভ বিমানবন্দরের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।

এদিকে ইউক্রেনের পূর্বের দনবাস অঞ্চলে এখনো প্রবল লড়াই চলছে। তবে রাশিয়া ওই অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি। নদী পার হয়ে সেভেরদনেতস্ক শহর ঘিরে ফেলার চেষ্টা চালিয়েছিল রাশিয়ার বাহিনী। কিন্তু লুহানস্ক অঞ্চলের গভর্নর সেরহি গাইদাই জানিয়েছেন, ইউক্রেনের বাহিনীর কারণে সেই চেষ্টা সফল হয়নি।

গভর্নর গাইদাই বলেন, ‘দোনেত্স্ক অঞ্চলের সীমান্তে প্রবল লড়াই চলছে, পোপাসনার পাশ থেকে।’ রাশিয়ার বাহিনীর অস্ত্রসরঞ্জাম ও সেনাশক্তির অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান মেজর জেনারেল কিরিলো বুদানভ বলেছেন, বছরের শেষ নাগাদ এই যুদ্ধ শেষ হয়ে যেতে পারে। মধ্য আগস্টে ঘটতে পারে মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা।

পুতিনকে ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের ফোন

ফিনল্যান্ড আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ন্যাটো সদস্য পদের জন্য আবেদন করবে জানাতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ফোন করেছিলেন ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিসো।

এক বিবৃতিতে নিনিসো জানান, ইউক্রেন আগ্রাসনসহ রাশিয়ার সাম্প্রতিক পদক্ষেপ কিভাবে ‘ফিনল্যান্ডের নিরাপত্তা পরিবেশ বদলে দিয়েছে’, সে ব্যাপারে পুতিনকে বলেছেন তিনি।

নিনিসো বলেন, ‘আলোচনা সরাসরি ও অকপট ছিল এবং কোনো উত্তেজনা ছাড়াই শেষ হয়েছে। উদ্বেগ এড়ানোকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল।’ অন্যদিকে পুতিনের দিকের আলোচনা তুলে ধরেছে রাশিয়ার গণমাধ্যম।

রুশ গণমাধ্যম বলছে, পুতিন সাউলি নিনিসোকে বলেছেন, বর্তমানে ফিনল্যান্ডের নিরাপত্তার জন্য কোনো হুমকি নেই। তাঁদের দীর্ঘদিনের নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে সরে আসা ভুল হবে এবং এই পরিবর্তনের ফলে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যকার সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মস্কো এ আলোচনাকে ‘মুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময়’ আখ্যা দিয়েছে।

ফিনল্যান্ডে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ

ফিনল্যান্ডে বিদ্যুত্ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়ার প্রতিষ্ঠান রাও নর্ডিক। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, সরবরাহ করা বিদ্যুতের জন্য ৬ মে থেকে কোনো অর্থ পায়নি তারা। সে কারণেই নেওয়া হয়েছে এই পদক্ষেপ। বহু বছর ধরেই ফিনল্যান্ডে বিদ্যুত্ সরবরাহ করে আসছে রাশিয়া। বর্তমানের লেনদেন জটিলতার সঙ্গে ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি না, সে বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়।

সূত্র : বিবিসি, এএফপি

শেয়ার করুন