সিলেটে পানিবন্দি ১৫ লাখ মানুষ

সিলেট প্রতিনিধি

অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটের প্রায় ১৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। গৃহবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন লাখো মানুষ। এসব মানুষকে আশ্রয় দিতে ১৯৯টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এছাড়াও বন্যাদুর্গত লোকজনের মধ্যে ১শত ২৯ মেট্রিক টন চাল ও ১ হাজার বস্তা শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

জানা যায়, গত সপ্তাহের মঙ্গলবার রাত থেকেই সিলেটে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। এখনও তা চলমান। বুধবার থেকেই সিলেটের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যেতে শুরু করে। বর্তমানে থেমে থেমে পানি বেড়ে সিলেটের বেশির ভাগ এলাকাই এখন ভাসছে বন্যায়। জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী জেলার ৬টি উপজেলা বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া পানি উঠে গেছে নগরের বেশির ভাগ এলাকায়ও।

universel cardiac hospital

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, সিলেটের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত পাঁচ দিনে ১২৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। অবিরাম বৃষ্টি ঝরছে সিলেটেও। ফলে দ্রুত বাড়ছে নদনদীর পানি। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি অমলসীদ ও কানাইঘাট পয়েন্টে প্রায় ১৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর সিলেট সদরে ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানির তোড়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ইতোমধ্যেই ভেঙে গেছে ২০টি নদীরক্ষা বাঁধ। এ ছাড়া কুশিয়ারা, সারি ও গোয়াইন নদীর পানিও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পাউবো সিলেটের উপসহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা বলেন, ‘পানি এত বেশি আসছে যে আমাদের বাঁধগুলো উপচে পড়ছে। কিছু কিছু জায়গায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি অতিরিক্ত থাকায় আমরা সংস্কারকাজও করতে পারছি না।’

এদিকে, আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, আগামী ২৩ জুন পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।

মঙ্গলবার দিনভর সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি মিনিটেই বাড়ছে পানি। নগরের অন্তত ২০টি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে এসব এলাকার সড়ক। বাসাবাড়ি, দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন সরকারি অফিসেও পানি উঠে গেছে। দুপুরে নগরের তালতলা এলাকার সড়কে হাঁটুর ওপরে পানি জমে গেছে। পানির কারণে সড়কজুড়ে ছিল দীর্ঘ যানজট। পানি ঢুকে কারও কারও গাড়িতে দেখা দিয়েছে ত্রুটি।

সিলেট জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে ১৯৯ টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এ পর্যন্ত সিলেট জেলায় পানিবন্দি রয়েছেন ১৩ থেকে ১৫ লাখ মানুষ। সোমবার রাতে ১৪ টি আশ্রয় কেন্দ্রে মানুষ ছিলো ৫শত জন। মঙ্গলবার সকালে তারা চলে গেছে। এ পর্যন্ত আমরা ১শত ২৯ মেট্রিক টন চাল ও ১ হাজার বস্তা শুকনো খাবার প্রধান করেছি।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান জানান, বন্যাকবলিতদের জন্য নগরে দুটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ ছাড়া দুটি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। নগরে শুকনো খাবার বিতরণেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, ‘প্লাবিত প্রতি উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বন্যাকবলিতদের প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তাও দেয়া হচ্ছে।’

শেয়ার করুন