আজ (বুধবার) সংবাদ সম্মেলনে এসে মুশফিকুর রহিম জানালেন, বাংলাদেশে অভিজ্ঞতার কোনও দাম নেই।
মুশফিকের প্রিয় শটগুলোর মধ্যে অন্যতম সুইপ। স্পিনের বিপক্ষে এই ধরনের শট নিয়মিতই খেলে থাকেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে পোর্ট এলিজাবেথে কঠিন পরিস্থিতিতে তিনি রিভার্স সুইপ খেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে দলকে বিপদে ফেলেন। ১৯২ মিনিট ক্রিজে থেকে ১৩৪ বল খেলে হাফসেঞ্চুরি ছুঁয়েছিলেন। অথচ সেই তিনিই কিনা লাঞ্চের আগে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে আউট হন। তিনি আউট হতেই হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। এমন ঘটনার পর মুশফিককে নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়।
আজ জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি পেয়েছেন মুশফিক। সেঞ্চুরির পথে বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ৫ হাজার রান পূর্ণ করেন তিনি। দারুণ সময় কাটিয়ে চতুর্থ দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে আবেগপ্রবণ হয়ে উঠলেন এই ব্যাটার।
এক প্রশ্নের জবাবে মুশফিক বলেছেন, ‘কিছু চাওয়া-পাওয়ার তো তেমন নেই। বাংলাদেশে আমার মনে হয়, অভিজ্ঞতার কোনও দাম নেই। সেখানে আমি মনে করি, ১৭ বছর এতটুকু যে আসতে পেরেছি, এটা অনেক বড় ব্যাপার। আল্লাহ সামনে যতটুকু রেখেছেন, আমার ভাগ্যে লিখেই রেখেছেন, যেন সেটা ভালোভাবে খেলতে পারি। এটাই আমার ইচ্ছা।’
২০০৫ সালের ২৬ মে ঐতিহাসিক লর্ডসে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার মাথায় টেস্ট ক্যাপ পরিয়ে দিয়েছিলেন তখনকার অধিনায়ক হাবিবুল বাশার। মাত্র ১৭ বছর ৩৫১ দিন বয়সে এই উইকেটকিপার ব্যাটারের অভিষেক হয়েছিল। সেই যে শুরু, এরপর একটি একটি করে মুশফিক খেলে ফেলেন ৮১ টেস্ট। ৫ হাজার রান পূর্ণ করার দিনে মুশফিক ফিরে গেলেন ১৭ বছর আগের দিনটিতে।
অভিষেক টেস্টের পর মুশফিকের মাথায় টেস্ট নিয়ে কী ভাবনা ছিল, সেটাই জানতে চাওয়া হয়েছিল। তিনি বললেন, ‘লক্ষ্য ছিল কীভাবে দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে পারবো। আগের টেস্ট (অভিষেক টেস্ট) আমার খুব একটা ভালো যায়নি। তারপরও আমি মনে করি, তিন ফরম্যাটের মধ্যে আমি সবসময় টেস্ট ক্রিকেটকেই প্রাধান্য দিয়েছি। প্রথমে আমি কেবল ব্যাটার ছিলাম, পরে উইকেটকিপার ব্যাটার হলাম। এখন শুধু ব্যাটার। সবসময়ই আমার কাছে প্রাধান্য পেয়েছে টেস্ট ক্রিকেট।’
সঙ্গে যোগ করলেন, ‘আমার শুরু থেকে ইচ্ছা ছিল যতদিন টেস্ট ক্রিকেট খেলবো, যেন বড় বড় অর্জন করতে পারি, ব্যক্তিগত ও দলগতভাবে। ভালোর তো শেষ নেই। তারপরও এখন যেখানে আছি আলহামদুলিল্লাহ ভালো।’
বেশ কিছুদিন ধরে চলা সমালোচনার জবাব ব্যাট হাতে দিয়েছেন মুশফিক। আর তার স্ত্রী জান্নাতুল কিফায়াত মন্ডি দিলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে! মুশফিক সেঞ্চুরি পেতেই মন্ডি ইনস্টাগ্রামে এই ব্যাটারের উদযাপনের ছবি পোস্ট করে লিখেন, ‘আমরা হাসি মুখেই বিদায় নিবো ইনশাআল্লাহ। তবে আপনাদের রিপ্লেসমেন্ট আছে তো? সেদিকে একটু নজর দিলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নয়ন হতো।’
স্ত্রীর পোস্ট প্রসঙ্গে মুশফিক বলেছেন, ‘প্রথমত আমি তো দেখিনি কী লিখেছে, এখন দেখলে বোঝা যাবে কী বলা যাবে বা কী লিখেছে।’
খারাপ খেললেই ক্রিকেটারদের নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হয়। এভাবে ঢালাও সমালোচনা ক্রিকেটারদের মেনে নেওয়া কঠিন বলে মনে করেন মুশফিক। ক্ষোভ ও অভিমান থেকে সাবেক অধিনায়ক বললেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই কোনও খেলোয়াড়ের জন্য কাম্য নয় এটা। কারণ একমাত্র বাংলাদেশেই দেখেছি একটা সেঞ্চুরি করলে ব্র্যাডম্যানের চেয়ে বড় কিছু হয়ে যায়। আবার দুই-তিনটা ম্যাচ রান না করলে গর্তের মধ্যে ঢুকে যায় (সমর্থকরা)। এটা একমাত্র বাংলাদেশেই হয়।’
সঙ্গে যোগ করলেন, ‘ জানি না এটা কারা করে, এটা তাদের সমস্যা। আমার মনে হয়, তারা যদি আরও ভালোভাবে বাংলাদেশ দলকে সমর্থন জোগায়, তাহলে খেলোয়াড়দের জন্য ও বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য আরও ভালো। আমরা তো সিনিয়র ক্রিকেটার, আমরা হয়তো বেশি দিন খেলবো না। জুনিয়র ক্রিকেটারদের যদি সমর্থনটা দেওয়া যায়, তাহলে তারা আরও অনুপ্রাণিত হবে। কারণ অন দ্য ফিল্ড আমাদের এতো কিছু করতে হয়, এখন অফ দ্য ফিল্ডে যদি এগুলো করতে হয়, তাহলে মাঠের কাজগুলো কঠিন হয়ে যায়।’