কালজয়ী কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

গত বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ তাঁর জন্মদিন। ১৯০৮ সালের ১৯ মে ভারতের বিহারের সাঁওতাল পরগনা, বর্তমান ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দুমকা শহরে প্রখ্যাত এ লেখকের জন্ম। তবে তাঁর পৈতৃক বাড়ি ছিল বাংলাদেশের বিক্রমপুরে।

পদ্মা নদীর মাঝির কুবের-গণেশ-মালা, প্রাগৈতিহাসিকের ভিখু-পাঁচীর মতো দারিদ্র্যপীড়িত অসাধারণ চরিত্রগুলো নিয়ে জীবনঘনিষ্ঠ গল্পে পাঠকহৃদয় কেড়েছেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর রচনার মূল বিষয়বস্তু মধ্যবিত্ত সমাজের কৃত্রিমতা, শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম, নিয়তিবাদ ইত্যাদি। ফ্রয়েডীয় মনঃসমীক্ষণ ও মার্কসীয় শ্রেণিসংগ্রাম তত্ত্ব দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন যা তাঁর রচনায় ফুটে উঠেছে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবী জুড়ে মানবিক মূল্যবোধের চরম সংকটময় মূহুর্তে বাংলা কথা-সাহিত্যে যে কয়েকজন লেখকের হাতে সাহিত্যজগতে নতুন এক বৈপ্লবিক ধারা সূচিত হয়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর নাটক, গল্প, সাহিত্যের সব বিখ্যাত চরিত্রের মধ্য দিয়ে নিজের ওপর পড়া দারিদ্র্যের কষাঘাত ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি পাঠকের কাছে।

এক জীবনে মানুষের অসামান্য হওয়ার জন্য যতো গুন থাকা দরকার, মানিকের জীবনে সেই সব গুণাবলিই বিদ্যমান ছিল। তাঁর নাম রাখা হয়েছিল অধরচন্দ্র। বাবার দেওয়া নাম ছিল প্রবোধকুমার আর ডাকনাম মানিক। তাঁর বাবা ছিলেন ঢাকা জেলার সেটেলমেন্ট বিভাগের সাবরেজিস্ট্রার।

পদ্মানদীর মাঝি এ সাহিত্যিকের কালজয়ী উপন্যাস। নদীকে ঘিরে গড়ে ওঠা জনবসতির সঙ্গে মানিক অনুভব করতেন এক আত্মিক বন্ধন। মাঝি-জেলেদের সঙ্গে গল্পে মজে থাকতেন, খাওয়া-দাওয়াও করতেন। সেই আত্মীয়তা থেকেই সৃষ্টি করেছিলেন তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় রচনা ‘পদ্মা নদীর মাঝি’।

পারিবারিক জীবনে সংগ্রামের কথাও তিনি লিখে গেছেন তাঁর ‘অপ্রকাশিত মানিক’ গ্রন্থে। চাকরির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেছিলেন মানিক বন্দোপাধ্যায়। কিছুদিন নবারুণ পত্রিকায় চাকরি করেন সহ-সম্পাদক হিসেবে। এরপর বঙ্গশ্রী পত্রিকায়ও একই পদে কাজ করেন। নিজের একটি প্রেস চালু করেছিলেন। কিন্তু অর্থাভাবে তা বন্ধ হয়ে যায়।

তাঁর লেখা পুতুলনাচের ইতিকথা, দিবারাত্রির কাব্য, পদ্মা নদীর মাঝি ইত্যাদি উপন্যাস ও অতসী মামি, প্রাগৈতিহাসিক, ছোট বকুলপুরের যাত্রী ইত্যাদি বাংলাসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলে বিবেচিত হয়। ইংরেজি ছাড়াও তাঁর রচনাগুলো বহু বিদেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।

১৯৫৬ সালের ৩ ডিসেম্বর মাত্র আটচল্লিশ বছর বয়সে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শক্তিশালী এ কথাসাহিত্যিক না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।

শেয়ার করুন