দুই বাংলার লোকগানের প্রবাদপ্রতিম শিল্পী ও লেখক অমর পালের জন্মদিন আজ। ১৯২২ সালের ১৯ মে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় তাঁর জন্ম। তিনি বাংলা লোকগানের কিংবদন্তী শিল্পী ও সুরকার হিসেবে পূজনীয়। তাঁর গাওয়া অসংখ্য গানের রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছে।
পাশাপাশি তিনি চলচ্চিত্রের গানেও কণ্ঠ দেন। যা আজও জনপ্রিয়। সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ ছবির ‘কতোই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়’ গানের নন্দিত গায়ক অমর পাল ২০১৯ সালে কলকাতায় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।
১৯৮৫ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্ষপূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে অমর পাল এসেছিলেন গান গাইতে। হাজারো মানুষ সেদিন তাঁর গান শুনেছিলেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হারিয়ে যাওয়া অনেক লোকগান শুনিয়েছিলেন সেদিন। দেশ ভাগের কিছু আগে ২৬ বছর বয়সে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাট চুকিয়ে তিনি পাড়ি জমান কলকাতায়।
১০ বছর বয়সে বাবা মহেশ চন্দ্র পালকে হারান অমর পাল। এরপর সংসারের ভার তিনি নিজের কাঁধে তুলে নেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন গানপাগল। মা দুর্গাসুন্দরী দেবীর কাছে লোকসংগীত শিখেছেন। পাশাপাশি উচ্চাঙ্গসংগীতের তালিম নেন ওস্তাদ আয়াত আলী খানের কাছে।
১৯৪৮ সালে আকাশবাণীর গীতিকার শচীন্দ্র নাথ ভট্টাচার্যের সঙ্গে কলকাতায় যান অমর পাল। সেখানে বেঙ্গল মিউজিক কলেজের অধ্যাপক মণি চক্রবর্তী, সুরেন চক্রবর্তী, ননীগোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে নতুন করে লোকসংগীত শেখেন। আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রের লোকসংগীতের শিল্পী হিসেবে তিনি প্রথম লোকসংগীত পরিবেশন করেন ১৯৫১ সালে।
দেবকী কুমার বসু, সত্যজিৎ রায়, ঋতুপর্ণ ঘোষের ছবিতে গান গেয়ে অমর পাল দারুণ প্রশংসিত হন। সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘হীরক রাজার দেশ’ ছবিতে তাঁর গাওয়া ‘আমি কতোই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়’ এখনো জনপ্রিয়।
অমর পালের গাওয়া খুব জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে ‘প্রভাত সময়ে’, ‘জাগো হে এ নগরবাসী’, ‘রাই জাগো’, ‘প্রভাতে গোবিন্দ নাম’, ‘রাই জাগো গো’, ‘ভারতী গৌরাঙ্গ লইয়া’, ‘হরি দিন তো গেল’, ‘মন রাধে রাধে’, ‘বৃন্দাবন বিলাসিনী’, ‘জাগিয়া লহো কৃষ্ণ নাম’, ‘আমার গৌর কেনে’, ‘আমি কোথায় গেলে’ ইত্যাদি।
অমর পাল ভারত সরকারের সংগীত-নাটক আকাদেমি পুরস্কারসহ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের লালন পুরস্কার ও সংগীত মহাসম্মান পেয়েছেন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাম্মানিক ডিলিট উপাধি দিয়েছে।