তিনি আছেন, তিনি থাকবেন!

সম্পাদকীয়

মোকতাদির চৌধুরী
ফাইল ছবি

বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলাম লেখক আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী পরপারে চলে গেছেন। আজ বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় ভোরে যুক্তরাজ্যের লন্ডনের বার্নেট হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। জীবনের প্রয়োজনে মৃত্যু অনিবার্য। মৃত্যুর মতো অবধারিত সত্য কারো পক্ষে এড়ানো সম্ভব নয়। অলঙ্ঘনীয় হলেও কোনো কোনো মৃত্যু আপনজন ও পরিবারকেই শুধু নয়, গোটা জাতিকেই ব্যথিত করে। কাঁদায়। শোকে মুহ্যমান করে।

বরেণ্য সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মৃত্যুর খবর গোটা বাঙালি জাতিকে শোকাহত করে তোলেছে। তাঁর প্রয়াণ বাংলাদেশ ও বাঙালির জন্য অত্যন্ত বেদনার। পৃথিবীর সবপ্রান্তে অবস্থানরত বাঙালি, বাংলাভাষীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে যুক্তরাজ্য প্রবাসী এই লেখকের মৃ্ত্যুর খবরে।

universel cardiac hospital

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্যসহ দেশে-বিদেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে শোক প্রকাশ করছেন নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। অমর ভাষাগান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো, একুশে ফেব্রুয়ারি’র রচয়িতা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে মত ও পথ পরিবার গভীর শোকাহত। আমরা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।

গাফ্ফার চৌধুরী ছিলেন একাধারে কবি, ভাষাসৈনিক, গীতিকার, কলামিস্ট, কথাসাহিত্যিক ও রাষ্ট্রচিন্তাবিদ। বাঙালির শ্রেষ্ঠ গৌরবজনক অধ্যায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ‘সাপ্তাহিক জয় বাংলা’ পত্রিকায় লেখনীর মাধ্যমে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। জয় বাংলা ছিল মুজিবনগর সরকারের নিবন্ধিত স্বাধীন বাংলার প্রথম পত্রিকা, গাফ্ফার চৌধুরী ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী সম্পাদক। আমৃত্যু তিনি লিখে গেছেন বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে।

পেশাগত কারণে তিনি জাতির পিতা ও সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড নিয়ে ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’ সিনেমা নির্মাণ করেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আর্ন্তজাতিক মানের আরেকটি সিনেমা নির্মাণের কথাও বলেছিলেন। তবে সেটি করে যেতে পারেননি। ষাটের দশকের শক্তিমান এ কথাশিল্পীর রাজনৈতিক কলাম খুব জনপ্রিয় ছিল।

আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী ছিলেন বিশ্বজয়ী বাঙালি। ২১ ফেব্রুয়ারি আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসে তাঁর লেখা গান বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়ে বাজে বিশ্বজুড়ে। তাঁর মৃত্যুতে প্রগতিশীল, সৃজনশীল ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী একজন অগ্রপথিককে হারিয়েছে বাংলাদেশ।

বাঙালি, বাংলা ভাষার অস্তিত্ব যতোদিন থাকবে, তিনি ততোদিন বেঁচে থাকবেন। সব মৃত্যুর মানে চিরতরে পৃথিবী থেকে মুছে যাওয়া নয়। কিছু মৃ্ত্যু মানে জীবন ও মৃ্ত্যুর মাঝখানের রেখা মুছে দিয়ে অমরত্বের পথে যাত্রা। তাঁর মৃত্যু তেমনই। তিনি বেঁচে থাকবেন ‘ডানপিটে শওকতে’, ‘চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যানে’, ‘নাম না জানা ভোরে’, ‘নীল যমুনায়’, ‘শেষ রজনীর চাঁদে’।

শেয়ার করুন