আপনারা কানপড়া শুনে রাজনীতি করবেন না : মোকতাদির চৌধুরী

মোহাম্মদ সজিবুল হুদা

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেছেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পরে কী ঘটেছে, আপনারা তা দেখেন নাই। আপনাদের কার কী ভূমিকা ছিল তা আমি জানিও না; কিন্তু উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ১৫ আগস্টের পরপরই মাঠে ছিল। আমি তখন থেকে দেখে আসছি, অনেকের টাকা হয়েছে, বিত্ত হয়েছে; কিন্তু পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পরে এই টাকাওয়ালারা কোথাও ছিল না।

বৃহস্পতিবার (১৯ মে) আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন ট্রেনিং সেন্টার মিলনায়তনে আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনিবার্হী কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

universel cardiac hospital

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, যারা এখন বিরাট বিরাট নেতা, তারা কেউই সেদিন ছিল না। আওয়ামী লীগের বিরাট বিরাট নেতাদের কেউ ছিল না। আমরা যারা ছিলাম, তারা সেইসব বিরাট নেতাদের তুলনায় চুনোপুঁটি। আমরাই মাঠে ছিলাম। আপনারা দেখেন নাই, ধূর ধূর ছি ছি করেছে মানুষজন, কেউ আশ্রয় দেয় নাই। টাকা নাই, পয়সা নাই, মাত্র কয়েকজন ছাত্র কর্মী ও কয়েকজন যুব কর্মী আওয়ামী লীগ গড়ে তুলেছিলাম। সেসময় আওয়ামী লীগ গড়ার মতো কোনো লোক ছিল না, এখন এই অবস্থা থেকে এসেছি। যারা বড় বড় কথা বলে, তাদের সকলেরই জীবনবৃত্তান্ত কিন্তু আমি জানি, সুতরাং দয়া করে আওয়ামী লীগটা করেন, দলবাজি করবেন, পকেট রাজনীতি করবেন না; আর যদি আওয়ামী লীগকে ভালো না লাগে তাহলে ছেড়ে দিয়ে চলে যান, জোরজবরদস্তি করে তো আপনাকে কেউ আওয়ামী লীগ করতে বলে নাই।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, আমরা আওয়ামী লীগকে গড়তে চাই, আওয়ামী লীগকে গড়তে হলে সবাইকে সহনশীল হতে হবে, ধৈর্য্যশীল হতে হবে এবং আওয়ামী লীগের যে আদর্শ আছে সেই আদর্শের প্রতি নিজেদের আনুগত্য থাকতে হবে । নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য থাকতে হবে, আমি স্লোগান দিলাম আমার নেতা তোমার নেতা শেখ হাসিনা শেখ হাসিনা আর শেখ হাসিনা নৌকা মার্কা দেওয়ার পর আমরা সকলে মিলে তার বিরুদ্ধে নেমে গেলাম, এইটা কোনো রাজনীতি হতে পারে না। এই ধরনের রাজনীতি আমরা সমর্থন করি না এবং এটা আমরা কখনো প্রশ্রয় দিব না। এই ধরনের রাজনীতিকে যারা প্রশ্রয় দেয়, তাদের সাথে আমরা একমত নই।

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য হলো- আমাদের ভিতরে সবসময় কিছু না কিছু লোক থাকে, কী কারণে তারা এসব করে তা আমি জানি না; তারা মনে করে সবসময় রংবাজি করলে, সবসময় যদি গ্রুপিং থাকে তাহলে সুবিধা হয়। আমার ব্যক্তিগতভাবে, বিশেষ করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে আমরা কোনো গ্রুপ নাই, আমি কোনো গ্রুপে বিশ্বাস করি না। আমার কাছে সবাই সমান, পার্থক্য হলো আমার ডাকে আপনারা এখানে এসেছেন, অন্যরা আসেননি; তারা যদি না শুনেন সেই বিষয়টি আমরা দেখব।

তিনি আরও বলেন, আপনারা কান কথায় কান দিবেন না, নিজের বুদ্ধিতে চলাফেরা করবেন। দলের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণা পত্র আছে, সেগুলো পড়েন; প্রতিদিন আমদের নেত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য রাখতেছে সেগুলো দেখেন, এখন তো কেন্দ্রীয় নেতারাও আপনাদের সাথে এসে কথা বলতেছে; শুনেন তাদের কথা, সেইভাবে চলেন। আমাদের জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মাহবুবুল আলম হানিফ সাহেব, স্বপন সাহেব এবং জেলার নেতা হিসেবে আমাদের পরামর্শ মতো চলেন। এতো কানপড়া শুনবেন না।

আশুগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত ওয়ার্ডসমূহের সম্মেলনের তাগিদ দিয়ে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, আপনারা প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে সম্মেলন করেন। আপনারা যদি মনে করেন সম্মেলন করতে গিয়ে কোথাও ঝামেলা হবে, তাহলে আপনারা আমাদেরকে সরাসরি বলবেন, আমরা জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি পাঠিয়ে আমরা সেই ওয়ার্ডে সম্মেলনের ব্যবস্থা করব।

প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগটা করেন, যদি বেঁচে থাকতে চান। ২০২৪ সালে ইউনিয়ন নির্বাচন হবে না, জাতীয় নির্বাচন হবে। সুতরাং আমাদের নেত্রী কেন তৃণমূলের ওপর জোর দিচ্ছেন, ওয়ার্ড কমিটির ওপর জোর দিচ্ছেন? সেটি বুঝার চেষ্টা করুন। আমাদের ওয়ার্ড কমিটির নেতাদের মাঝে মাঝে দেখা যায় তারা শেখ হাসিনার চেয়েও বড় নেতার ভূৃমিকায়! কারণ শেখ হাসিনা মার্কা দেন নৌকা তারা মার্কা দেয় ঘোড়া, তাহলে তারা শেখ হাসিনার চেয়ে বড় নেতা হলো না? আপনারা নেত্রীর চেয়ে বড় আওয়ামী লীগার হয়েন না। হতে চাইলে দলটা ছেড়ে দিয়ে অন্য জায়গায় চলে যান।

তিনি আরও বলেন, আশুগঞ্জ উপজেলা হয়েছে শেখ হাসিনার হাত ধরে, চরচারতলা ইউনিয়ন হয়েছে শেখ হাসিনার হাত ধরে; সব ভুলে যায় আমরা। আটটি ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র দুইটা ইউনিয়নে নৌকা পাস করেছে। এই যদি হয় অবস্থা, এরজন্য কী মনে করেন পাবলিক দায়ী? না, আমাদের নেতারা যারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আছে, তারা ওল্টাপাল্টা কাজ করেছে বিধায় তো এমনটা হয়েছে।

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ চাই, গ্রুপিংয়ের পার্টি চাই না। আবার সবাই আওয়ামী লীগ (নির্বাচন এলে বিদ্রোহী) এমনটাও চাই না, তবে যারা সবসময় আওয়ামী লীগ এবং সবসময় মার্কা নৌকায় বিশ্বাস করে আমি তাদেরকেই চাই। প্রয়োজনে নৌকা আর অপ্রয়োজনে নৌকার বিরুদ্ধে এরকম লোককে দলে চাই না।

আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী ছফিউল্লাহ মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি তাজ মোহাম্মদ ইয়াছিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সহ- প্রচার সম্পাদক স্বপন কুমার রায়, আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক আবু নাছের আহমেদ, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ ও আশুগঞ্জ উপজেলার সকল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

শেয়ার করুন