গ্রামের চারপাশে থইথই পানি। অধিকাংশ ঘরবাড়ি ডুবে আছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, পানির মধ্যে ভাসছে গ্রামগুলো। কয়েক দিন আগেও যেখানে ধান মাড়াই ও শুকানোর জায়গা করা হয়েছিল, সেখানে এখন ৫ থেকে ১০ ফুট পানি। এ চিত্র সিলেট সদর উপজেলার নীলগাঁও, নলকূট, কাজিরগাঁও, বনগাঁও এবং নোয়াগাঁও গ্রামের। এসব গ্রামের অন্তত ১৫ হাজার বাসিন্দা সপ্তাহখানেক ধরে পানিবন্দী জীবন যাপন করছেন।
গ্রামগুলোর বাসিন্দারা জানান, ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে সিলেটজুড়ে যে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তারাও এর ভুক্তভোগী। গ্রামগুলোর বেশিরভাগ ঘরেই হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি। রান্নাবান্নার একমাত্র উপায় মাটির চুলা, সেসবও এখন পানির নিচে। ফলে অনেকে কেবল শুকনা চিড়া বা মুড়ি খেয়েই দিন কাটাচ্ছেন।
খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট তীব্র হয়ে দেখা দিয়েছে। বাড়িঘরে পানি ওঠায় শুকনা স্থানের অভাবে গবাদিপশু রাখা নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করা যাচ্ছে না।
নলকূট গ্রামের ষাটোর্ধ্ব বাসিন্দা সাজেরা খাতুন বলেন, দুই ছেলে ও তাদের সংসার নিয়ে তার পরিবার। ছেলেরা দিনমজুর। পানি আসায় তাদের উপার্জন বন্ধ। ঘরে পানি উঠেছে। এখন সবাই মিলে একটি কক্ষে কোনোরকমে বসবাস করছেন। চুলা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় চিড়া খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, দেড় দশক আগেও নলকূট ও আশপাশের গ্রামের চারদিকে প্রচুর খাল ও নালা ছিল। অতিবৃষ্টিতে সেসব জলাধার পানি ধারণ করত। এখন সেসব ভরাট করে আবাসনসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে ওঠায় পানিপ্রবাহের স্বাভাবিক পথ রুদ্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে যেসব বাড়িঘরে বন্যায় তুলনামূলকভাবে কম পানি থাকার কথা, সেখানেও বেশি পানি উঠেছে।
নীলগাঁও গ্রামে প্রায় দেড়’শ পরিবার পানিবন্দী। খাবারসহ নানা সংকটে পানিবন্দী জীবনে তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই বলে অনেকে আক্ষেপ করেন।