প্রায় তিন সপ্তাহ পর পাম তেল রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করছে শীর্ষ সরবরাহকারী ইন্দোনেশিয়া। গত ২৮ এপ্রিল কার্যকর হওয়া এ বিধিনিষেধ উঠে যাবে আগামী সোমবার (২৩ মে)। ইন্দোনেশিয়ার এ ঘোষণায় স্বস্তির আভাস দেখা গেছে আন্তর্জাতিক ভোজ্যতেলের বাজারে। তাতে আশাবাদী হতে পারেন বাংলাদেশিরাও। কারণ বাংলাদেশ প্রায় ৮০ শতাংশ ভোজ্যতেল আমদানি করে ওই ইন্দোনেশিয়া থেকেই।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে গত বছরের নভেম্বর থেকে পাম তেল নীতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোর সরকার। স্থানীয় বাজারে ভোজ্যতেলের দাম অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় গত এপ্রিলের শেষের দিকে পাম তেল রপ্তানি নিষিদ্ধ করে তারা। এতে বৈশ্বিক ভোজ্যতেলের বাজারে যেমন ঘাটতি তৈরি হয়, তেমনি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন স্থানীয় পাম চাষিরা। এমনিতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে ভোজ্যতেল সরবরাহে ঘাটতি চলছে, তার মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার অপ্রত্যাশিত নিষেধাজ্ঞায় হু হু করে বাড়তে থাকে দামও।
রান্নাবান্না থেকে শুরু করে সাবান-শ্যাম্পু বা গাড়ির জ্বালানি, কোথায় নেই পাম তেলের ব্যবহার। বৈশ্বিক চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশ একাই সরবরাহ করে ইন্দোনেশিয়া। এরপর রয়েছে প্রতিবেশী মালয়েশিয়া।
প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো ইন্দোনেশিয়ায় জনপ্রিয় নেতা বলে পরিচিত। তবে পাম তেল রপ্তানি নিষিদ্ধ করার পর থেকে তার জনপ্রিয়তায় রীতিমতো ধস নামে। এরই মধ্যে উইদোদোর জনসমর্থন গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে গেছে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন দেশটির পাম চাষিরা। এ অবস্থায় দেশের ভেতরে-বাইরে থেকে ব্যাপক চাপের মুখে গত বৃহস্পতিবার (১৯ মে) পাম তেল রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন উইদোদো।
যদিও স্থানীয় বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমানোয় দেশটির লক্ষ্যমাত্রা এখনো পূরণ হয়নি। শুক্রবার ইন্দোনেশীয় অর্থনীতি মন্ত্রী এয়ারলাঙ্গা হার্তার্তো বলেছেন, দেশে এক কোটি টন ভোজ্যতেলের মজুত নিশ্চিত করতে সরকার পাম তেলের ওপর দেশীয় বাজার বাধ্যবাধকতা (ডিএমও) আরোপ করবে। তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিএমওর আকার নির্ধারণ করবে, যা প্রতিটি উত্পাদককে অবশ্যই পূরণ করতে হবে।
ইন্দোনেশীয় সরকার গত জানুয়ারিতে কোম্পানিগুলোর পরিকল্পিত রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার ২০ শতাংশ ডিএমও নির্ধারণ করেছিল। মার্চ মাসে তা বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়। পরে অবশ্য উচ্চ রপ্তানি শুল্কের কারণে সেটি বাতিল করা হয়েছিল।
তেলের বাজারে স্বস্তির লক্ষণ
ইন্দোনেশিয়ার অর্থনীতি মন্ত্রী বলেছেন, চাহিদার বিপরীতে দেশটির মাসিক ভোজ্যতেলের মজুত গত মার্চ মাসে যেখানে ৩৩ শতাংশ ছিল, নিষেধাজ্ঞার কারণে তা বেড়ে ১০৯ শতাংশে পৌঁছেছে। এছাড়া প্রতি লিটার ভোজ্যতেলের দাম ১৯ হাজার ৮০০ রুপিয়া (১১৮ দশমিক ১৯ টাকা) থেকে কমে ১৭ হাজার রুপিয়ায় (১০১ দশমিক ৪৮ টাকা) দাঁড়িয়েছে।
মালয়েশিয়ার মেব্যাংকের বিশ্লেষক ওং চি টিং বলেন, ইন্দোনেশিয়া নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তের পর আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত পাম তেলের (সিপিও) দাম কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। তার মতে, ইন্দোনেশীয় পাম তেলের প্রাপ্যতা আন্তর্জাতিক বাজারে সিপিওর দাম প্রভাবিত করবে।
তাছাড়া, রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া ইন্দোনেশিয়ার চাষিদের জন্যে বেশ স্বস্তিদায়ক। চলতি সপ্তাহেই পাম তেল রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে জাকার্তায় বিক্ষোভ করেছেন শত শত পাম চাষি।
ইন্দোনেশিয়ার ক্ষুদ্র কৃষকদের সংগঠন আপকাসিনদোর চেয়ারম্যান গুলাত মানুরং এক বিবৃতিতে বলেছেন বলেছে, রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার পর পাম ফলের দাম প্রায় ৭০ শতাংশ কমে গেছে। এ কারণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি। গুলাতের মতে, ইন্দোনেশিয়ার জন্য পাম তেল কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা দেখিয়ে দিয়েছে এই নিষেধাজ্ঞা।
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণায় স্বস্তি পেয়েছেন ব্যবসায়ীরাও। ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েল অ্যাসোসিয়েশন আশা করছে, দেশে পাম তেলের যথেষ্ট উৎপাদন থাকলে ডিএমও পূরণে কোনো সমস্যা হবে না।
বৃহস্পতিবার ইন্দোনেশীয় সরকার রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণার পরপরই মালয়েশিয়ায় বেঞ্চমার্ক পাম তেলের দাম প্রায় দুই শতাংশ কমতে দেখা গেছে। এছাড়া ইন্দোনেশীয় রুপিয়ার শক্তি বেড়েছে ০.৪৭ শতাংশ এবং জাকার্তা স্টক ইনডেক্সের সূচক বেড়েছে প্রায় ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
সূত্র: রয়টার্স